শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত

শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সারা মুসলিম জাহানের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। শুক্রবারকে বিশ্ব মুসলিমের জন্য সাপ্তাহিক হজের দিন বলা হয়। বিশেষ করে গরীব মানুষের জন্য যারা টাকা পয়সা খরচ করে হজ করতে সৌদি আরব যেতে পারে না। শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। 


 কুরআন ও সুন্নাহ মতে যেভাবে দিনটি অতিবাহিত ও আমলগুলো পালন করার নির্দেশনা এসেছে সেভাবেই ইবাদতগুলো আদায় করা বিশ্ব মুসলিমদের জন্য জরুরী। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মুসলমানদের জন্য করণীয় শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সম্পর্কে।

পোষ্ট সূচিপত্র 


শুক্রবারের বিশেষ আমল হচ্ছে উত্তম রূপে গোসল করা

শুক্রবারে বিশেষ আমল এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হচ্ছে এই দিনে উত্তম রূপে গোসল করা। পুরো দেহ ধোয়ার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জনের একটি মাধ্যম হলো গোসল। ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের তিনটি ফরজ রয়েছে। কারো ওপর গোসল ফরজ হয়ে গেলে সে এই তিনটি ফরজ আদায় না করা পর্যন্ত পবিত্র হতে পারবেনা।

 ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিদিন গোসল করা বাধ্যতামূলক নয় তবে মানুষ যেহেতু ইসলামের অন্যতম বিধান জুমার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাই, তাই এই দিন গোসল করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উত্তম। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ ( সা:) সাহাবায়ে কেরামকে জুম্মার দিন গোসলের ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন।

হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে আউস ইবনে আউস সাকাফি ( রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ ( সা:) আমাকে বলেন জুম্মার দিন যে ব্যক্তি গোসল করল এবং করাল। সকাল সকাল মসজিদে এলো, ইমামের নিকটবর্তী হয়ে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল তার জন্য প্রতি কদমের বিনিময়ে এক বছরের নফল রোজা ও নামাজের সওয়াব রয়েছে।

অন্য এক হাদিসে রয়েছে সালমান ফারাসি ( রা:) থেকে বর্ণিত নবী ( সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি জুম্মার দিন উত্তম রূপে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করে, নিজ ঘরে সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয়ে মসজিদে যাই এবং দুজন লোকের মধ্যে ফাঁক না করে, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে এবং ইমামের খুতবা দেওয়ার সময় চুপ থাকে।

 তাহলে তার সে জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত সময়ের সব গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন। উল্লেখিত হাদিসে জুমার দিন উত্তম রূপে গোসল করার প্রতি গুরুত্বরোপ করা হয়েছে। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত জুমার দিন যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা।

শুক্রবারের বিশেষ আমল হচ্ছে মসজিদে সবার আগে যাওয়া 

শুক্রবারে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে আগে প্রবেশ করার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রাসূল ( সা:) বলেছেন যে ব্যক্তি জুম্মার দিন গোসল করে প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেলো সে যেন একটি গরু কুরবানী করল। আর যে এরপর প্রবেশ করলো সে যেন একটি ছাগল কুরবানী করল। এরপর যে প্রবেশ করল সে যেন একটি মুরগী কোরবানি করল।

এই দিনের প্রধান কাজ হল জুমার নামাজ পড়া। তাই নামাজের জন্য আহবান করার সঙ্গে সঙ্গে আগে আগে মসজিদে গিয়ে উপস্থিত হতে হবে। কেননা কুরআন পাকে এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। " হে বিশ্বাসীগন জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণের জন্য দ্রুত ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ কর, এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা উপলব্ধি করো "

শুক্রবারের বিশেষ আমল হচ্ছে বেশি বেশি দরুদ পড়া

শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেশি বেশি দুরুদ পড়া। জুম্মার দিন তথা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উত্তম। যদি কোন ব্যক্তি একবার দুরুদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০ বার রহমত নাযিল হয়। জুমার দিন আসরের পরে দরুদ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

রাসূল ( সা:) বলেছেন জুম্মার দিন তোমরা বেশি করে আমার জন্য দরুদ পাঠ কর কেননা তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হবে। অন্য এক হাদিসে আছে যে ব্যক্তি জুম্মার দিন আসরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল সে যেন ইসমাইল ( আ:) এর বংশজাত আটজন গোলামকে আজাদ করল। 

হাদিস শরীফে আর ও বর্ণিত আছে যে ব্যাক্তি শুক্র বারের দিন আসরের নামায পড়ে দিক পরিবর্তন না করে কেবলা মুখী হয়ে ৮০ বার দরুদ শরীফ পড়বে তার ৮০ বছরের গুনাহ আল্লাহ্‌ তায়ালা মাফ করে দিবেন। 

অন্য এক হাদিসে আছে শুক্রবারের দিন কোন ব্যাক্তি ১০০ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে তবে তার আমল নামায় এক শত বছরের সওয়াব লেখা হবে। সুতরাং আমাদের সকল মুমিন মুসলমানদের উচিত জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ শরীফ পাঠ করা।

শুক্রবারে বেশি বেশি জিকির আজকার ও দোয়া করা 

শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত এর আরেকটি বিশেষ ফজিলতপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি জিকির-আজকার করা ও দোয়া করা। হযরত আউস ইবনে আউসঃ রাঃ বর্ণনা করেন রাসূল ( সা:)  বলেছেন তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর একটি হলো জুম্মার দিন। এই দিন হযরত আদম ( আ:)  কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তার মৃত্যু হয়েছে।

 এই দিন সিঙ্গায় ফু দেওয়া হবে, আর এই দিনই কেয়ামত সংঘটিত হবে। সুতরাং শুক্রবার দিনটি তোমরা জিকির-আজকার ও দোয়ার আমলে অতিবাহিত করো। হাদিস শরীফে আছে যদি কোন ব্যক্তি শুক্রবারের দিন ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার পর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত মসজিদে বসে জিকির আজকার করে তবে তার জন্য আল্লাহ তাআলা বেহেশতে 70 টি দরজা বলন্দ করে দেবেন।

যার দু দরজার মধ্যবর্তী দূরত্ব এত প্রশস্ত হবে যে একটি দ্রুতগামী ঘোড়া 70 বছর পর্যন্ত দৌড়াতে থাকলেও তা শেষ হবে না। সপ্তাহের মধ্যে শুক্রবার দিন শ্রেষ্ঠ, সব দিনের সরদার আল্লাহ তায়ালা এবং তার প্রিয় নবী  (সা:) এর নিকট অনেক প্রিয় ।

শুক্রবারে এমন একটি সময় আছে যে সময় কোন ব্যক্তি নামাজ পড়ে যদি আল্লাহতালার নিকট প্রার্থনা করেন আল্লাহতালা দয়া করে তা কবুল করেন। তাহলো শুক্রবারের শেষ সময়। এই সময় নিম্নের দোয়াটি বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবেন। দোয়াটি হচ্ছে ঃ
" সুবহানাকা লা ইল্লাহা ইল্লা আনতা ইয়া হান্নানু, ইয়া মান্নানু, ইয়াবাদিউস সামাওয়াতি ওয়াল আরদে ইয়া জাল জালালী ওয়াল ইকরাম "

জুম্মার দিন আসর হইতে মাগরিবের পূর্ব পর্যন্ত নিম্নলিখিত দুয়াগুলো পাঠ করলে অসংখ্য সওয়াব হাসিল হবে।  দোয়া গুলো হচ্ছেঃ একশতবার " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু  ইউহয়ি ওয়া হুয়া হাইয়্যুল্লাইয়ামুতু বিয়াদিহিল খাইরু অয়াহুয়া আলা কুল্লি সাইয়িন কাদির" 

* এক শতবার " সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম"
* একশতবার " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কুল মুবিন " 
* একশতবার " আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়ারাসুলিকান নাবিয়িল উম্মিয়ি "
* একশতবার " ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিউল আজিম" এরপর 
* একশতবার তাওবা পড়বেন।

শুক্রবারের বিশেষ আমল হচ্ছে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করা

কুরআনের কোন অংশ মুখস্ত করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়। হাদিসে আছে যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ এর প্রথম ১০ আয়াত মুখস্ত করবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে মুক্তি পাবে। রাসূল  (সা:) আমাদের সূরা কাহাফ এর প্রথম দশটি আয়াত মুখস্ত করার তাগিদ দিয়েছেন। যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা আল কাহাফ পড়বে তার ঈমানের নূর এ জুমাহ হতে আগামী জুমাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে।


জুমার দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করলে কিয়ামত দিবসে তার পায়ে নিজ থেকে আকাশের মেঘমালা পর্যন্ত নুর আলোকিত হবে এবং ২ জুমার মধ্যবর্তী গুনাহ মাফ হবে। বৃহস্পতিবার দিন শেষে সূর্য ডোবার পর থেকে শুক্রবার  সূর্য ডোবাপর্যন্ত যেকোনো সময় সুরা কাহাফ পাঠ করলে হাদিস অনুযায়ী আমল করা হবে ইনশাল্লাহ।

যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা আল কাহাফ পড়বে তার ঈমানের নূর এ জুম্মা হতে আগামী জুম্মাহ পর্যন্ত চমকাতে থাকবে। তবে কেউ যদি পুরো সূরা তেলাওয়াত করতে না পারেন তবে  সূরাটির প্রথম দশ আয়াত ও শেষ দশ আয়াত তেলাওয়াত করতে পারেন।

 শুক্রবারে আরও একটি বিশেষ আমল হচ্ছে সূরা দুখান তিলাওয়াত করা

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে হযরত রাসূলে কারীম  (সা:) ইরশাদ করেছেন যে ব্যাক্তি জুমার রাত্রে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত্রে সূরা দুখান পাঠ করবে সকাল হবার আগে তার সকল গুনাহ খাতা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন মাফ করে দেবেন।


শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে দেখি সুরা দুখান এর ফজিলত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হযরত উমামা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে ব্যাক্তি জুম্মার রাতে অথবা দিনে সূরা দুখান পাঠ করবে আল্লাহ পাক তার জন্য বেহেশতে একটি স্বতন্ত্র ঘর নির্মাণ করে রাখবেন।

যেকোনো প্রকারের ভয়াবহ বিপদ ও সমস্যা দেখা দিলে পূর্ণ পবিত্রতার সাথে এক বৈঠকে নির্ধারিত সময়ে বিসমিল্লাহ সহকারে সাতবার সূরা দুখান পাঠ করবেন। অতঃপর দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহ পাকের দরবারে সাহায্য ও করুণা প্রার্থনা করবেন।অতঃপর প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে একবার করে বিসমিল্লাহ সহকারে সূরা দুখান পাঠ করবেন। ইনশাল্লাহ যাবতীয় বিপদ হতে নিরাপদ থাকবেন। 

শেষ কথা -- শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত

হযরত আবু হুরাইরা রাঃ বলেন রাসূল ( সা:) আমাদের সঙ্গে একদিন শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন জুমার দিন এমন একটি সময় আছে সেই সময়টায় যদি কোন মুসলিম নামাজ আদায়রত অবস্থায় থাকে এবং আল্লাহর কাছে কিছু চাই আল্লাহ অবশ্যই তার সেই দোয়া কবুল করবেন।

মুসলিম উম্মাহর সাপ্তাহিক উৎসবের দিন শুক্রবার। এই দিনকে " ইয়াওমুল জুম্মা " বলা হয়। মুসলমানদের উচিত জুম্মার দিন বিশেষ আমল ও এবাদতের নিমগ্ন থাকা। কুরআন সুন্নাহর উপর আমল করা। যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করা। জুমার দিনটি কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ ও দোয়ার আমলে অতিবাহিত করা। আল্লাহ সকলকে বোঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url