মৌরি খাওয়ার কার্যকারী ২০টি উপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মৌরি খাওয়ার ২০ উপকারিতামৌরি খাওয়ার উপকারিতা অনেক। রান্নাঘরের বিভিন্ন ধরনের মসলার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মৌরি। মৌরির কথা মনে করতেই বিভিন্ন সুস্বাদু খাবারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। এ মসলাতেই লুকিয়ে আছে নানা রোগের সমাধান, তা আপনারা অনেকেই জানেন না।
আজকে আমরা আলোচনা করব মৌরি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে। চলুন আজকের আলোচনা থেকে জেনে নিই মৌরি খেলে শরীরে কি কি উপকার হয়।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মৌরি খাওয়ার কার্যকারী ২০টি উপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- মৌরির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
- মৌরি খাওয়ার কার্যকারী ২০ উপকারিতা
- মৌরি খাওয়ার নিয়ম
- মৌরি খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
- শেষ কথা-মৌরি খাওয়ার কার্যকরী ২০টি উপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়
- মৌরির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
মৌরি খাওয়ার উপকারিতা জানার আগে আমাদের মৌরির বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানা দরকার। নানা কারণে হঠাৎ অসুস্থতা আপনাকে প্রায়ই ঘিরে ধরে। কিছু কিছু অসুস্থতায় অনেকে ওষুধ না খেয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হীন ভেষজ উপাদানের ওপর ভরসা করেন। শরীরে সুস্থতা নিশ্চিত করতে দারুন কাজ করে এই মৌরি। মৌরির বেশ কিছু পুষ্টিগুণ রয়েছে যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিচে মৌরির কিছু পুষ্টিগুণ উল্লেখ করা হলোঃ
ফাইবারঃ মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজম শক্তি ভালো রাখতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন সিঃ মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
পটাশিয়ামঃ মৌরিতে পটাশিয়াম রয়েছে, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়ামঃ মৌরিতে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম রয়েছে। এই দুই খনিজ উপাদানই হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত রাখতে এবং স্নায়ুর কার্যক্রম সচল রাখতে সহায়ক।
আয়রনঃ মৌরি আয়রনের একটি ভালো উৎস, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়ক এবং অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টঃ মৌরিতে ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং বার্ধক্য রোধ করে।
এস্ট্রোজেনিক বৈশিষ্ট্যঃ মৌরি নারীদের হরমোন ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং মাসিকের সমস্যা কমাতে সহায়ক।
মৌরি খাওয়ার কার্যকারী ২০ উপকারিতা
মৌরি খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। মৌরি আমাদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক রক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। নিয়মিত মৌরি খেলে শরীরের অজস্র উপকার পাওয়া যায়, যা সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবন যাপন নিশ্চিত করে। মৌরি খাওয়ার বেশ কিছু উপকারিতা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
মৌরি খেলে হজমের সমস্যা দূর হয়ঃ মৌরি দীর্ঘদিন ধরে হজম সহায়ক হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে উপস্থিত তেল গ্যাস্ট্রিক নিঃসরনে সহায়তা করে, যা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুত করে। পেট ফাঁপা সমস্যা থেকেও এটি মুক্তি দেয়। মৌরিতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি উন্নত করতে সহায়ক। এটি পেটের পীড়া কমিয়ে স্বস্তি দেয়। এতে থাকা প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট যকৃতের কার্যকারিতা বাড়ায়। মৌরি পেটের বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করে, যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং অন্যান্য হজমের সমস্যা থেকে সমাধান পাবেন।
মৌরি ওজন কমাতে সহায়কঃ মৌরি খেলে ক্ষুধার পরিমাণ কমে, ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার বেশি সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। মৌরি দেহের বিপাকীয় গতি বাড়িয়ে ক্যালোরি পড়াতে সহায়তা করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার অতিরিক্ত ফ্যাট জমার হার কমবে। এছাড়া মৌরি পেটের মেদ কমাতে সহায়ক। এতে থাকা ফাইটো-কেমিক্যালস দেহের চর্বি পোড়াতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
মৌরি শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দূর করতে কার্যকরঃ মৌরি শ্বাসতন্ত্রের সুরক্ষায় সাহায্য করে। এর এন্টি- ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ শ্বাসনালী প্রদাহ কমিয়ে সহজ শ্বাস নিতে সহায়তা করে। কাশি বা ঠান্ডার মতো সমস্যা হলে মৌরি চা খুব উপকারী। এটি গলার খুসখুসানি দূর করে শ্বাস নিতে আরাম দেয়। মৌরি এলার্জির প্রতিকারেও সহায়তা করে। মৌরি খেলে শ্বাসতন্ত্রের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে যা অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিসের মত সমস্যায় উপকার দেয়। তাই আপনি যদি অ্যাজমা বা ব্রংকাইটিসের মত সমস্যায় ভুগেন তাহলে নিয়মিত মৌরি চা বানিয়ে খেতে পারেন।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মৌরি খাওয়ার উপকারিতাঃ মৌরি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্তের সোডিয়ামের মাত্রা কমাতে মৌরি সহায়ক। এটি দেহের তরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে। মৌরি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে। তাই নিয়মিত মৌরি খেলে রক্তের প্রবাহ সুস্থ থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় মৌরি খাওয়ার উপকারিতাঃ মৌরি তে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়কে মজবুত করতে সহায়তা করে। নিয়মিত মৌরি খেলে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয় এবং শক্তি বজায় রাখতে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের গঠন এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এটি হাড়ের গঠনতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়।মৌরির মধ্যে থাকা ফসফরাস হাড়ের গঠন সঠিক রাখতে সহায়তা করে। এটি অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার হাড়ের গঠন শক্ত ও মজবুত থাকবে।
মৌরি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়কঃ মৌরি চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করতে কার্যকর। এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান চুলের গোড়াকে মজবুত করতে সহায়তা করে এবং চুল পড়ার সমস্যা কমায়। চুলের খুশকি দূর করতেও মৌরি খুব কার্যকর। মৌরির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বক সুস্থ রাখে। মৌরির প্রাকৃতিক তেল চুলে আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার চুলের উজ্জ্বলতা ও মসৃণতা বৃদ্ধি পাবে।
আরো পড়ুনঃ ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়
মৌরি মানসিক প্রশান্তি দেয় ও ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ মৌরির মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক তেল এবং গুনাগুন মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। এটি মস্তিষ্ককে শিথিল করতে সহায়তা করে এবং মানসিক চাপ কমায়। মৌরি স্নায়ুকে শান্ত করে এবং ঘুমের মান উন্নত করে। তাই নিয়মিত মৌরি খেলে আপনি অনিদ্রার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। মৌরির মধ্যে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ঘুমের সমস্যা দূর করতে খুব কার্যকর। এটি মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় মৌরি খাওয়ার উপকারিতাঃ মৌরি চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় কার্যকর। এতে উপস্থিত ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মৌরি চোখের ইনফ্লেমেশন কমাতে সহায়তা করে। এটি চোখের প্রদাহ কমিয়ে স্বস্তি দেয় এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সহায়তা করে। মৌরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের কোষকে সুরক্ষিত রাখে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার চোখের ক্লান্তি কমে যাবে এবং আপনার দৃষ্টি শক্তি সুরক্ষিত থাকবে।
মৌরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ মৌরিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীরকে জীবাণু থেকে সুরক্ষা দেয়।মৌরি ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এটি শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মৌরির মধ্যে থাকা মিনারেল শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মজবুত করে। মৌরি খেলে ঠান্ডা, কাশি ও ফ্লুর মত সাধারণ অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
মৌরি কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করেঃ মৌরি কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এটি কিডনির কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং বর্জ্য পদার্থ নিঃসরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মৌরি দেহে অতিরিক্ত তরল জমার সমস্যা কমায়। এটি কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে প্রস্রাবের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। কিডনি স্টোনের ঝুঁকি কমাতে মৌরি কার্যকর। এটি কিডনির উপর চাপ কমিয়ে সহজে কর্মক্ষমতা বাড়ায় যা কিডনি স্টোনের গঠন রোধে সহায়তা করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার কিডনির কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকবে।
মৌরি লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করেঃ মৌরি লিভারের বিষাক্ত পদার্থ মুক্ত করতে সহায়ক। এটি লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, যা লিভারের কর্মক্ষমতা উন্নত করে।মৌরি লিভারের কোষগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার কে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে এবং কোষের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। লিভারের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে মৌরি কার্যকর। এটি লিভারের ইনফ্লেমেশন কমিয়ে কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, যা লিভারের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। তাই আপনার লিভারকে ভালো রাখতে নিয়মিত মৌরি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
মৌরি খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকেঃ মৌরি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার শর্করার শোষণ ধীর করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক।মৌরিতে থাকা এন্টি-ডায়াবেটিক উপাদান ইনসুলিনের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি রক্তের শর্করার উঠানামা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য মৌরি একটি স্বাস্থ্যকর উপাদান। এতে থাকা ফাইটো-কেমিক্যাল ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাই আপনারা যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা নিয়মিত মৌরি খাওয়ার অভ্যেস করুন।
মৌরি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক উপাদানঃ মৌরির মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। এটি কোষের ডিএনএ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।মৌরির ফাইটো কেমিক্যাল ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি শরীরে ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধ করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মৌরি কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকে কমায়। এতে থাকা ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং কোলনকে সুরক্ষিত রাখে, যা কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে ক্যান্সারের মতো কঠিন রোগ থেকেও আপনি মুক্তি পাবেন।
মৌরি মূত্রথলির সংক্রমণ কমাতে সহায়কঃ আমরা অনেকে মূত্রথলির সংক্রমণে ভুগি। মৌরি মূত্রথলির সংক্রমণ দূর করতে সহায়ক। এটি মূত্রাশয়ের প্রদাহ কমায় এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। মুত্রাশয়ের সংক্রমণের সময় মৌরিচা পান করলে উপকার পাওয়া যায়। এটি প্রস্রাবের প্রবাহ বাড়ায় এবং সংক্রমণজনিত ব্যাথা থেকে মুক্তি দেয়। মৌরি মূত্রথলির জীবনু প্রতিরোধে সহায়ক। এতে থাকা এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মূত্রথলিকে সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে মূত্রথলির সংক্রমনের হাত থেকে রেহায় পাবেন।
মৌরি মেয়েদের মাসিকের ব্যথা কমাতে সহায়কঃ মাসিকের সময় পেট ব্যথা প্রায় মেয়েদের ক্ষেত্রে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে।মাসিকের সময় ব্যথা বা অস্বস্তি কমাতে মৌরি কার্যকরী। এর এন্টি ইনফ্লামেটরি গুণাগুণ পেটের ব্যথা কমিয়ে দেয়। মাসিকের সময় হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে মৌরি সহায়তা করে। এটি দেহে প্রাকৃতিকভাবে অ্যাস্ট্রোজেনের মতো কাজ করে, যা মাসিক চক্র নিয়মিত রাখতে সহায়ক। মৌরি রক্ত প্রবাহ সুষ্ঠু রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা কম অনুভূত হয় এবং স্বস্তি পাওয়া যায়। তাই মাসিকের ব্যথা থেকে রেহাই পেতে আপনি নিয়মিত মৌরি চা খাওয়ার অভ্যাস করে তুলুন।
মৌরি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কার্যকরীঃ মৌরি মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে খুব কার্যকরী। এতে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান মুখের জীবাণু দূর করে এবং মুখকে সতেজ রাখে। মৌরি মুখের লালা নিঃসরণ বাড়ায় যা মুখের ভেতর জীবাণুর বিস্তার রোধ করে এবং দুর্গন্ধ কমায়। এটি মুখের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সহায়ক।মৌরি চিবিয়ে খেলে মুখে দীর্ঘস্থায়ী সতেজতা পাওয়া যায়। এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, যা আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায়ক। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি চিবিয়ে খেলে মুখের দুর্গন্ধ থেকে মুক্ত থাকবেন।
আরো পড়ুনঃ মুখের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়
মৌরি মাইগ্রেন ও মাথাব্যথা কমাতে সহায়কঃ মৌরি মাইগ্রেন বা মাথাব্যথার জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে থাকা এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত মৌরি খেলে রক্ত সঞ্চালন উন্নত থাকে, যা মাথার টেনশন বা চাপ কমায়। নিয়মিত মৌরি খেলে মাইগ্রেনের তীব্রতা হ্রাস পায় এবং ব্যাথা দ্রুত আরাম দেয়। মৌরি চা মাথা ব্যথা কমাতে সহায়ক। এটি মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং স্ট্রেস বা চাপের কারণে সৃষ্ট মাথা ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই নিয়মিত মৌরি চা খেলে আপনি মাইগ্রেনের মাথাব্যথা থেকে রেহাই পেতে পারেন।
গ্যাস্ট্রিক এবং আলসার নিরাময়ে মৌরি খাওয়ার উপকারিতাঃ মৌরি গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে সহায়ক। এর মধ্যে থাকা এন্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পাকস্থলীর প্রদাহ কমায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে। মৌরি পাকস্থলীতে আলসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। এটি হজম প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং পাকস্থলীর সুস্থতা বজায় রাখে। মৌরি আলসারের জন্য একটি প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। এটি পাকস্থলীর জ্বালা ভাব কমিয়ে আলসারের ব্যথা দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন।
মৌরি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ মৌরি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে, যা ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখে। মৌরি ত্বক থেকে টক্সিন অপসারণ করে যা ত্বককে সুস্থ রাখে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্যজ্জল করে এবং ত্বকে প্রাকৃতিক আভা প্রদান করে।মৌরি ত্বকের বার্ধক্য প্রতিরোধ করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার ত্বকের বলিরেখা কমবে, যা আপনার ত্বককে দীর্ঘ সময় ধরে তরুণ ও সুন্দর রাখতে সহায়ক হবে।
আরো পড়ুনঃ ত্বকে ব্রণ দূর করার উপায়
মৌরি ত্বকের অ্যালার্জি ও সংক্রমণ দূর করেঃ মৌরি ত্বকের এলার্জি এবং সংক্রমণের সমস্যা দূর করতে কার্যকর। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুনাগুন ত্বকের জীবাণু ধ্বংস করে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। মৌরি ত্বকের এলার্জি কমাতে সহায়ক। মৌরি পেস্ট তৈরি করে ত্বকে লাগালে এলার্জি, র্যাশ এবং সংক্রমনের সমস্যায় আরাম পাওয়া যায়। মৌরি ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে স্বাভাবিক ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি নিয়মিত মৌরি খেলে আপনার ত্বকের সংক্রমণ কমবে এবং আপনার ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে।
মৌরি খাওয়ার নিয়ম
আমাদের প্রিয় পাঁচফোড়নের একটি উপাদান হলো মৌরি। রান্নায় স্বাদ বাড়াতে এর উপাদানের জুড়ে মেলা ভার। খাবারের সুগন্ধ ও স্বাদ বাড়াতে মৌরির ব্যবহার বেশ পুরোনো। বিভিন্ন খাবারে ফোড়ন হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই মৌরি। এছাড়া ও নানা কাজে লাগে মৌরি। মৌরি খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত মৌরি খেতে পারেন তবে দূর হয়ে যাবে শারীরিক অনেক সমস্যা। মৌরি খাওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে যা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
- এক চা চামচ মৌরি এক গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই পানি খেতে পারেন। এটি শরীরের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়াও ভেজানো মৌরী খালি পেটে চিবিয়ে খেতে পারেন। এটি হজমের সাহায্য করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়।
- খাবার পর এক চিমটি মৌরি চিবিয়ে খেলে হজম শক্তি বাড়ে এবং মুখে সতেজতা আসে। এটি গ্যাস ও অম্বলের সমস্যা দূর করতেও সহায়তা করে।
- এক চা চামচ মৌরির সাথে দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে গরম পানিতে ফুটিয়ে চা বানিয়ে তাতে সামান্য বিট লবন মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি আপনার সর্দি-কাশি, পেট ফাঁপা এবং অম্বল দূর করবে।
- মৌরি শুকিয়ে গুঁড়ো করে রেখে দিনে ১ থেকে ২ চা চামচ করে গরম পানির সঙ্গে খেতে পারেন। এছাড়াও আপনি বিভিন্ন খাবারের সাথে মৌরির গুড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি হজম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
- মৌরি খাওয়ার কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
মৌরি খাওয়ার অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। মৌরি স্বাদ এবং সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ হলেও মৌরি খাওয়ার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। বিশেষ করে যদি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা হয়। সম্ভাব্য কয়েকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- কিছু মানুষের মৌরিতে এলার্জি থাকতে পারে। কিছু মানুষ রয়েছে যাদের একাধিক খাবারে এলার্জি সমস্যা হতে দেখা যায়। তাদের ক্ষেত্রে মৌরি খেলেও অ্যালার্জি সমস্যা হতে পারে। ফলে তাদের ত্বকে র্যাশ, চুলকানি বা শ্বাসকষ্টের মত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এমন সমস্যা হলে মৌরি খাওয়া বন্ধ করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
- মৌরি ফাইটোইস্ট্রোজেন সমৃদ্ধ। অতিরিক্ত গ্রহণে এটি হরমোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। গর্ভবতী মহিলাদের এটি কম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- মৌরির মধ্যে কিছু এসিডিক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত খেলে কিছু মানুষের মধ্যে উদ্বেগের সমস্যার কারণ হতে পারে।
- কিছু ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে মৌরি খাওয়ার পর মাথা ঘোরা বা ঝিমুনি অনুভূত হতে পারে।
আপনি যদি নিয়মিত মৌরি খেয়ে থাকেন এবং এরকম কোন সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাছাড়া যে কোন নতুন খাদ্যাভাস শুরু করার আগে বিশেষ করে যদি আপনি কোন চিকিৎসা নিয়ে থাকেন, তাহলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শুরু করা উত্তম।
শেষ কথা-মৌরি খাওয়ার কার্যকরী ২০টি উপকারিতা ও কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মৌরি খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। মৌরি হল এমন একটি প্রকৃতিগত উপাদান যা প্রাচীনকাল থেকে তার বহুবিধ স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হজম ক্ষমতা বাড়ানো, শ্বাসকষ্ট উপশম, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করার মত বিভিন্ন গুনে সমৃদ্ধ মৌরি সহজলভ্য এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। এটি প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে সংযুক্ত করে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সম্ভব।
তবে মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত পরিমাণে মৌরি সেবন করলে হরমোনের তারতম্য, এলার্জি কিংবা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সুতরাং সংযম বজায় রেখে সঠিকভাবে মৌরি গ্রহণ করতে হবে।বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই প্রাকৃতিক উপাদান নিয়মিত সঠিক পরিমাণে সেবনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখতে পারি। তবে অতিরিক্ত সেবন ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url