মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমাদের সকলের জেনে রাখা জরুরী। কেননা বর্তমান সময়ে প্রায় মানুষই মাইগ্রেন ব্যথায় ভুগে থাকেন। মাইগ্রেন একটি সাধারন কিন্তু জটিল ধরনের মাথাব্যথা যা প্রধানত মস্তিষ্কের রক্তনালীর পরিবর্তন এবং স্নায়ুতন্ত্রের সক্রিয়তার সাথে সম্পর্কিত।
আজকে আমরা আলোচনা করব মাইগ্রেন ব্যথা কেন হয়, মাইগ্রেন ব্যথার লক্ষণ এবং মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে। মাইগ্রেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ মাইগ্রেন মাথাব্যাথা থেকে মুক্তির উপায়
- মাইগ্রেন মাথাব্যথা কেন হয়
- মাইগ্রেন মাথাব্যথার লক্ষণ
- মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
- শেষ কথা-মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
মাইগ্রেন মাথাব্যথা কেন হয়
মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে মাইগ্রেন মাথাব্যথা কেন হয় অর্থাৎ মাইগ্রেন মাথাব্যাথার কারণ কি? মাইগ্রেন মাথাব্যথা মূলত মস্তিষ্কের রক্তনালীর প্রসারণ এবং স্নায়ুতন্ত্রের অতিসক্রিয়তার কারণে হয়। যদিও এ সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, কিছু সাধারণ কারণ এবং উদ্দীপক বিষয়গুলো মাইগ্রেনকে উদ্ভব করতে পারে। এটি সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে এবং অন্যান্য উপসর্গের সাথে দেখা দিতে পারে। মাইগ্রেন মাথাব্যথা হওয়ার কিছু কারণ নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
আরো পড়ুনঃ চিয়া সিডস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
- জিনগত কারণঃ মাইগ্রেন একটি বংশগত সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় পরিবারের একাধিক সদস্য মাইগ্রেনে আক্রান্ত হন। মাইগ্রেনের জন্য দায়ী কিছু নির্দিষ্ট জিনের অস্তিত্ব রয়েছে যা মস্তিষ্কের রক্তনালী এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
- স্নায়ুতন্ত্রের সংবেদনশীলতাঃ মাইগ্রেন মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্রের অস্বাভাবিক কার্যকলাপ এর সঙ্গে জড়িত। মাইগ্রেনের সময় মস্তিষ্কের রক্ত প্রবাহের পরিবর্তন ঘটে এবং স্নায়ুতন্ত্র অতি-সংবেদনশীল হয়ে ওঠে, যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
- হরমোনের পরিবর্তনঃ বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে হরমোনের পরিবর্তন মাইগ্রেনের একটি বড় কারণ। ঋতুচক্রের সময়, গর্ভাবস্থায় বা মনোপজের আগে-পরের সময়ে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা ওঠানামা করে, যা মাইগ্রেনের ঝুঁকি বাড়ায়।
- পরিবেশগত কারণঃ জোরালো আওয়াজ, উচ্চ শব্দ হঠাৎ তাপমাত্রা পরিবর্তন বা বায়ুর চাপের ওঠানামা, ধোঁয়া, ধুলা বা গন্ধ এসব কারণেও মাইগ্রেন মাথাব্যাথা হয়ে থাকে।
- খাদ্য ও পানীয় গ্রহণঃ কিছু খাবার ও পানীয় মাইগ্রেন ট্রিগার করতে পারে যেমন চকলেট, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, প্রক্রিয়াজাত খাবার, এসব খাবার গ্রহণেও মানগ্রেন মাথাব্যথা হতে পারে।
- মানসিক চাপ এবং ক্লান্তিঃ মানসিক চাপ, দীর্ঘ সময় কাজ করা বা অনিদ্রা মাইগ্রেনের অন্যতম বড় উদ্দীপক। মানসিক চাপের সময় শরীরে করটিসল হরমোন বৃদ্ধি পায়, যা মাইগ্রেন শুরু করতে পারে।
- পানি শূন্যতাঃ যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান না করলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়, যা মাইগ্রেনের একটি সাধারন কারণ।
মাইগ্রেন মাথাব্যথার লক্ষণ
মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানার সাথে সাথে আমাদেরকে জানতে হবে মাইগ্রেন মাথাব্যথার লক্ষণগুলো কি। মাইগ্রেন মাথা ব্যথার লক্ষণগুলো সাধারণ মাথাব্যথা থেকে আলাদা এবং বিভিন্ন পর্যায়ে ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। মাইগ্রেন মাথাব্যথার লক্ষণগুলো নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
- মাইগ্রেন শুরু হওয়ার কয়েক ঘন্টা বা কয়েকদিন আগে কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে যেমনঃ বিরক্তি, উত্তেজনা বা বিষন্নতা, ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করা, বারবার হাই তোলা, ঘন ঘন মুত্রত্যাগ করা, কোন বিশেষ খাবারের প্রতি আকর্ষণ বা অনীহা তৈরি হওয়া, ঘার বা শরীরের কোন অংশ শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।
- সাধারণত মাথার একপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়, তবে দুই পাশেও হতে পারে। ব্যথা ধুকপুক করতে পারে।
- উজ্জ্বল আলো ও জোরালো শব্দ অসহনীয় হয়ে ওঠে।
- বমি বমি ভাব বা বমি হয়, শরীর দুর্বল লাগে এবং অতিরিক্ত গন্ধ বা ধোঁয়ার প্রতি সংবেদনশীলতা তৈরি হয়।
- অনেক ক্ষেত্রে মাথাব্যথা শুরুর আগে চোখে আলোর ঝলকানি দেখা যেতে পারে। শরীরের কোন অংশে ঝিনঝিন অনুভূতি বা অসাড়তা দেখা দিতে পারে। কথা বলার সময় জড়তা বা অস্পষ্ট উচ্চারণ হতে পারে।
- মাইগ্রেনের ব্যথা শেষ হওয়ার পর শরীর ক্লান্ত বা অস্বস্তিকর অনুভব করতে পারে। এ ধাপ কয়েক ঘণ্টা থেকে একদিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এ লক্ষণগুলো যদি আপনি আপনার শরীরে দেখতে পান তাহলে বুঝবেন আপনার মাইগ্রেন ব্যাথা শুরু হয়েছে। যদি মাইগ্রেনের লক্ষণগুলো তীব্র হয় বা নতুন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে আপনাকে খুব দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
মাইগ্রেন একটি তীব্র মাথাব্যথার সমস্যা যা অনেক সময় কষ্টদায়ক হতে পারে। মাইগ্রেন দূর করার জন্য কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি ও চিকিৎসা রয়েছে যা আপনাকে আরাম দিতে পারে। নিচে মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় গুলো দেওয়া হলোঃ
মাইগ্রেনের প্রাথমিক পরিচর্যা ও ঘরোয়া পদ্ধতিঃ মাইগ্রেনের শুরুতেই সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ব্যাথার তীব্রতা কমানো সম্ভব। তাই আপনাকে মাইগ্রেন ব্যথা শুরুতেই সঠিক পদক্ষেপ নিতে হবে।
- মাইগ্রেন শুরু হলে একটি অন্ধকার, নীরব ঘরে শুয়ে থাকুন। উজ্জ্বল আলো এবং উচ্চ শব্দ মাইগ্রেন ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই আপনি উজ্জ্বল আলো এবং উচ্চ শব্দ থেকে দূরে থাকুন।
- মাইগ্রেন ব্যথা শুরু হলে আপনি ঠান্ডা সেঁক বা গরম সেঁক ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার মাথা যন্ত্রণা কিছুটা কম হবে।
- ডিহাইড্রেশন মাইগ্রেনের কারণ হতে পারে। আপনি পর্যাপ্ত পানি পান করে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করুন।
- ক্যাফেইন মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই মাইগ্রেন ব্যথা শুরু হলে আপনি চা বা কফি পান করতে পারেন। তবে এটি অতিরিক্ত পান না করা উচিত।
- যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন মানসিক চাপ কমায় যা মাইগ্রেনের প্রভাব কমাতে পারে। তাই আপনাকে মাইগ্রেনের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন চালিয়ে যেতে হবে।
- আদা বা হারবাল চা মাইগ্রেনের তীব্রতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। তাই মাইগ্রেনের তীব্রতা কমানোর জন্য আপনি আদা চা বা হারবাল চা পান করতে পারেন।
মাইগ্রেন প্রতিরোধের কার্যকর পদ্ধতিঃ মাইগ্রেন প্রতিরোধে নিয়মিত জীবন যাপন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাইগ্রেনের সম্ভাব্য কারণ গুলো চিহ্নিত করে তা এড়িয়ে চলা জরুরী। দীর্ঘমেয়াদি মাইগ্রেনের পুনরাবৃত্তি কমাতে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি নিচে বর্ণিত ধাপগুলো অনুসরণ করেন তাহলে মাইগ্রেন নিয়ন্ত্রণ করা এবং এর ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবে।
আরো পড়ুনঃ পেঁপে খাওয়ার উপকারিতা
- আপনি পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অনিয়মিত খাবার খাওয়া এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধার্ত থাকা এড়িয়ে চলুন। আপনি সুস্থ খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং ফাস্টফুড বা প্রসেসড ফুড এড়িয়ে চলুন।
- আপনাকে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমাতে হবে। মানসিক চাপ কমাতে রিলাক্সেশন পদ্ধতি শিখুন।
- অতিরিক্ত আলোর ঝলকানি এবং উচ্চ শব্দ থেকে দূরে থাকুন।
- হরমোন জনিত পরিবর্তন বা ঋতুচক্রের সময় বিশেষ যত্ন নিন।
- ক্যাফেইন ও অ্যালকোহলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন।
মাইগ্রেনের তীব্র ব্যথা কমানোর মেডিকেল চিকিৎসাঃ যদি আপনার মাইগ্রেন নিয়মিত হয় বা তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে আপনাকে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি মাইগ্রেন নিয়মিত হয় বা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার ঘন ঘন মাইগ্রেন হয় বা তীব্র হয় তবে একজন নিউরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নিয়মিত ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনুন।
- ডাক্তারের পরামর্শে প্যারাসিটামল, ইবুপ্রোফেন বা ট্রিপটান জাতিয় ওষুধ সেবন করতে পারেন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি মাইগ্রেনের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধক ঔষধ গ্রহণ করুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনজেকশন থেরাপি বা বোটুলীনাম টক্সিন ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা-মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায়
আমরা আজকের আর্টিকেলে মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আজকের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে মাইগ্রেন থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও সচেতনতা অপরিহার্য। সময়মতো ঘুম, সুষম খাদ্যভাস, পর্যাপ্ত পানি পান এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মতো অভ্যাস মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে উপযুক্ত ঔষধ ব্যবহার এবং মাইগ্রেনের কারণগুলো এড়িয়ে চলাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। মাইগ্রেন একটি দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলেও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ ও সচেতনতার মাধ্যমে এর প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব। সবার আগে আপনি আপনার নিজের শরীরের সংকেতগুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তবেই মাইগ্রেন থেকে মুক্তি মিলবে।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url