শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
চিয়া সিডস খাওয়ার উপকারিতাশরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায় গুলো আমাদের জেনে রাখা খুব দরকার। মানব দেহের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের শরীরে প্রতিটি কোষে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন। আমাদের শরীরের হাড়, হৃদয়, পেশী এবং স্নায়ুতন্ত্রের জন্য ক্যালসিয়াম অত্যাবশক। ক্যালসিয়ামের অভাবে আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জটিল সমস্যায় ভুগে থাকি।
অথচ আমরা বুঝতেই পারিনা এসব সমস্যা আমাদের শরীরে কিসের জন্য হচ্ছে। আজকে আমরা আলোচনা করব ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরে কি কি সমস্যা হয় এবং ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কিভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে। তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
পোস্ট সুচিপত্রঃ শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
- শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কি কি সমস্যা হয়
- কোন কোন খাবারে ক্যালসিয়াম রয়েছে
- শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
- শেষ কথা-শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কি কি সমস্যা হয়
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায় গুলো আলোচনা করার আগে আমাদের জানতে হবে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কি সমস্যা হয়। তা নাহলে আমরা বুঝতে পারবো না আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন আছে কিনা। আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরে সাধারণত যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা নিচে বর্ণনা করা হলোঃ
হাড় ও দাঁতের দুর্বলতাঃ ক্যালসিয়াম হাড় এবং দাঁতের গঠনে মূল ভূমিকা পালন করে। সাধারণত ক্যালসিয়ামের জন্যই হাড় এবং দাঁতের গঠন মজবুত হয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়। যার ফলে হাড় দুর্বল হয়ে যায় এবং সহজে ভেঙে যেতে পারে। এই সমস্যা অস্টিওপোরোসিস নামে পরিচিত, যা হাড়ের ভাঙ্গনের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। দাঁতের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা দেখা দেয় এবং দাঁত ক্ষয় হতে শুরু করে।
পেশী সংকোচন এবং খিঁচুনিঃ ক্যালসিয়াম পেশী সংকোচনের জন্য অপরিহার্য। এর অভাবে পেশীর দুর্বলতা, খিচুনি এবং বারবার মাংসপেশীতে টান পড়তে পারে। সাধারণত পায়ে, হাতে এবং পিঠের মাংসপেশীতে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাছাড়া ক্যালসিয়ামের অভাবে আমাদের শরীরের হাড়ে প্রদাহ বা ব্যথা তৈরি হয়, যা অনেক যন্ত্রণাদায়ক।
স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যাঃ ক্যালসিয়াম স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত জরুরী। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে নার্ভের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে হাত-পা ঝিঁঝিঁ ধরা, অসাড়তা এবং ত্বকের ঝিমুনি বা চুলকানি হতে পারে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে অন্যান্য স্নায়ুবিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকিঃ ক্যালসিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
ত্বকের সমস্যাঃ ক্যালসিয়াম ত্বকের কোষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এর অভাবে ত্বক শুষ্ক এবং ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ত্বকে চুলকানি, শুষ্কতা এবং ফাটা ত্বক হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্য নষ্ট করে দেয়।
ক্লান্তি এবং অবসন্নতাঃ ক্যালসিয়ামের অভাবে শরীরের শক্তির উৎপাদন কমে যায়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি এবং অবসন্নতা অনুভূত হতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে মানুষ দুর্বল, অবসাদগ্রস্থ এবং কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে উল্লেখিত সমস্যা গুলো দেখা দেয়। উল্লেখিত সমস্যার সমাধানে আমাদের সঠিক চিকিৎসা এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণ করা উচিত। যথাযথ খাদ্যাভাস, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট এবং ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে শরীরের ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণ করা যেতে পারে।
কোন কোন খাবারে ক্যালসিয়াম রয়েছে
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায় সমূহ জানার আগে আমাদের জানা দরকার কোন কোন খাবারে ক্যালসিয়াম রয়েছে অর্থাৎ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো। আমাদের জানার দরকার কোন খাবারগুলো খেলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হবে। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করতে খাদ্যাভাসে সঠিক পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দ্রুত ঘাটতি পূরণ করতে সময়মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে শক্তিশালী করা উচিত।শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য কিছু বিশেষ ধরনের খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নিচে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলোঃ
দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারঃ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের কথা বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় দুধের কথা। দুধের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হারের ঘনত্ব বাড়ায়। প্রতিদিন এক গ্লাস দুধ শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের ভালো পরিমাণ সরবরাহ করে। তাই আমাদের খাদ্য তালিকায় নিয়ম করে দুধ খাওয়া উচিত।
তবে কারো যদি দুধে এলার্জি থাকে বা দুধ হজমে সমস্যা হয় তাহলে পনির, দই, ছানা, মাখন এসব রাখুন খাদ্য তালিকায়।দইয়ে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি প্রোবায়োটিকস থাকে যা হজমে সাহায্য করে। এছাড়া পনির, ছানা, মাখনে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা নিয়মিত খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।
সবুজ শাকসবজিঃ সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কড়াইশুঁটির দানায় প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। কলাইশাক, পালংশাক, ব্রুকলি এই সবজিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। যা নিয়মিত খেলে আমাদের শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ হয়।
বাদাম এবং বীজঃ বাদাম এবং বীজে ক্যালসিয়াম সহ প্রয়োজনীয় চর্বি এবং অন্যান্য পুষ্টি থাকে যা শরীরের জন্য অনেক ভালো।বিশেষ করে পিনাট বাটার, আমন্ড বাদাম বা কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। তিল, চিয়া বীজ, মেথি বীজ, এইসব খাবারে ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন ও প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করার পাশাপাশি শরীরকে শক্তিশালী ও হাড়কে মজবুত করে তোলে।এইসব খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হবে না।
মাছ ও ডিমঃ কিছু সামুদ্রিক মাছ বিশেষ করে ছোট মাছগুলো ক্যালসিয়ামের খুবই ভালো উৎস। এসব মাছে ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অন্যান্য মাছ ও ডিমে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা নিয়মিত খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়।
ডাল জাতীয় খাবারঃ ডাল জাতীয় খাবার যেমন লাল মসুর ডাল। ছোলা এসব খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন, ফাইবার এবং আয়রন রয়েছে যা হারড়র জন্য খুব উপকারী। এছাড়াও এসব খাবার ক্যালসিয়ামের পাশাপাশি ফসফরাসের ভালো উৎস যা হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য করে। এসব খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হওয়ার সাথে সাথে শরীরের আরও অনেক সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
টাটকা ফলমূলঃ বিভিন্ন ফলমূল শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। যেমন কমলা, আমলকি এসব ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী। এছাড়া ডুমরেও প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। নিয়মিত ডুমুর খেলেও শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর হয়।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায় সম্পর্কে আমরা এখন আলোচনা করব। শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার প্রয়োজনীয়তা অনেক রয়েছে। কেননা আমাদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের হাড়ের ক্ষয়ও শুরু হয়ে যায়।হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় শুধুমাত্র খাদ্য এবং পুষ্টি নয়, বরং নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ। হাড়ের রোগ যেমন অস্টিওপোরোসিস বা অন্যান্য ডিগেনারেটিভ হাড়ের রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আরো পড়ুনঃ মৌরি খাওয়ার কার্যকরী ২০টি উপকারিতা
শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি একটি সাধারণ সমস্যা, যা সঠিক খাদ্যাভ্যাস, জীবনধারা পরিবর্তন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সহজে পূরণ করা যায়। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ, সাপ্লিমেন্ট নেওয়া, ভিটামিন ডি পাওয়া এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিক মাত্রা বজায় রাখলে হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষিত থাকে এবং ক্যালসিয়াম ঘাটতির ঝুঁকি কমে যায়। শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার কয়েকটি উপায় উল্লেখ করা হলোঃ
খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করুনঃ শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণের সহজতম উপায় হলো প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যুক্ত করা। দুধ, দই, পনিরের মতো দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও সামদ্রিক মাছ বিশেষ করে ছোট মাছ ও ডিম ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।
আরো পড়ুনঃ শসা খাওয়ার উপকারিতা
শাক সবজির মধ্যে পালং শাক, ব্রুকলি এবং বাদামের মধ্যে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, আখরোট, আমন্ড এইসব খাবারে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। এগুলো নিয়মিত খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণ সম্ভব। বিশেষ করে শিশু এবং প্রবীনদের জন্য ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার বেশ উপকারী। এছাড়াও তিল, চিয়া বীজ, মেথি বীজ এসব খাবারের প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফসফরাস, আইরন ও প্রোটিন সমৃদ্ধ যা আমাদের সকলের শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
শরীরের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারের সঙ্গে ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার খাওয়া উচিত। কারণ ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই খাবারের পরিকল্পনা করতে গিয়ে একসঙ্গে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি যুক্ত খাবার যোগ করলে উপকারিতা আরো বেড়ে যায়।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার জন্য সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুনঃ যদি খাদ্য থেকে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাওয়া না যায় তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে। ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে-- ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ক্যালসিয়াম সিট্রেট। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ডোজ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দ্রুত পূরণ হতে পারে।
তবে অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে কিডনিতে পাথর জমার ঝুঁকি থাকে, তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ঠিক নয়। সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পুরোনের দিকেও খেয়াল রাখা প্রয়োজন। ভিটামিন ডির ঘাটতি থাকলে শরীর ক্যালসিয়াম শোষণ করতে পারেনা, ফলে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টের কার্যকারিতা কমে যায়।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি গ্রহন করুনঃ শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন ডি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিনের সূর্যের আলো ভিটামিন ডির অন্যতম প্রধান উৎস। সূর্যের আলোতে সময় কাটালে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সহায়তা করে। আপনি প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩টার মধ্যে কিছু সময় সূর্যের আলোতে থাকলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ডি পাবেন।
প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট সূর্যের আলো গ্রহণ করলে শরীরে ভিটামিন ডির ঘাটতি পূরণ হয়। তবে অতিরিক্ত সূর্যালোকে ত্বকের ক্ষতির আশঙ্কা থাকায় দীর্ঘ সময় বাইরে না থাকায় ভালো। বিশেষ করে যাদের রোদে যাওয়ার সুযোগ কম, তাদের জন্য ভিটামিন ডির সাপ্লিমেন্টও একটি কার্যকারী বিকল্প হতে পারে। তবে প্রাকৃতিক উপায় সূর্যের আলো থেকে ভিটামিন ডি পাওয়া গেলে তা শরীরের জন্য অধিকতর উপকারী।
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল গ্রহণে সংযম রাখুনঃ ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা কমাতে পারে, তাই এগুলো সীমিত পরিমানে গ্রহণ করা উচিত। কফি বা চায়ের মধ্যে উচ্চ পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে যা হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এড়াতে ক্যাফেইন যুক্ত পানীয় কম পান করা উচিত।
অ্যালকোহলের অতিরিক্ত সেবনও হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয় এবং ক্যালসিয়ামের শোষণ ক্ষমতা হ্রাস করে। এ কারণে আপনার অ্যালকোহল গ্রহণেও সংযোগ প্রয়োজন। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন করলে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলেও শরীরে ক্যালসিয়ামের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য আপনার খাবার অভ্যাসেও পরিবর্তন আনতে হবে।
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করতে ধূমপান এড়িয়ে চলুনঃ ধূমপান শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব কমায়। নিকোটিন এবং অন্যান্য টক্সিন শরীর থেকে ক্যালসিয়াম বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে ক্যালসিয়াম ঘাটতি বাড়ে। তাই ধূমপান ছাড়াই ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণ করা সহজ হয়। ধূমপান ছাড়ার মাধ্যমে শুধু ক্যালসিয়াম শোষণই বৃদ্ধি পায় না, বরং হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং অন্যান্য নানা স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকিও কমে যায়।
ধূমপান ছাড়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল যেমন ধূমপান ছাড়া থেরাপি, সাপোর্ট গ্রুপ এবং ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে। এসব পদ্ধতি ধূমপান ছাড়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং শরীরের ক্যালসিয়াম শোষণ বৃদ্ধি করে। ধূমপান ছাড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণ আরো কার্যকরী হয়। সুষম খাদ্য, পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রেখে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তা সহজেই পূরণ করা সম্ভব। তাই ধূমপান এড়িয়ে চলা শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
শেষ কথা-শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়
শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করার উপায়, শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হলে কি কি সমস্যা হয়, কোন কোন খাবার থেকে আমরা ক্যালসিয়াম পেয়ে থাকি, কিভাবে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করা যায় এসব বিষয় নিয়ে আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আজকের আলোচনা থেকে আপনারা নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দূর করা কেবল হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্য নয়, সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি কোন অগ্রাহ্য করার বিষয় নয়। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ঘাটতি দূর করতে সঠিক খাবার গ্রহণের পাশাপাশি সচেতন জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রামও অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়ামের অভাব নির্ণয় করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত এবং সঠিক পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে শরীরের সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url