রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত
আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সুসম্পর্ক তৈরীর গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে রাত। মুমিন বান্দা আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে রাত জেগে এবাদত বন্দগী করেন। আবার দুনিয়ার যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর মুমিন বান্দারা রাতে নিয়মিত আমল করে থাকেন।
আমরা অনেকেই জানিনা রাতে কি কি আমল করতে হয়। আজকে আমরা রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা করব। চলুন আজকের আলোচনা থেকে জেনে নেওয়া যাক রাতের বিশেষ আমল ও ফজিলত সম্পর্কে।
পোস্ট সুচিপত্র
- রাতে সূরা মূলক তেলাওয়াত করা
- রাতে সূরা সেজদাহ তেলাওয়াত করা
- রাতে সূরা তাকাসুর তেলাওয়াত করা
- রাতে সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা
- রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা
- রাতে তিন কুল পাঠ করে শরীর মাসেহ করা
- রাতে সূরা কাফিরুন পাঠ করা
- রাতে অজু করে ঘুমাতে যাওয়া
- রাতে ঘুমানোর আগে কিছু জিকির করা
- শেষ কথা - রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত
রাতে সূরা মূলক তেলাওয়াত করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাতের বেলায় সূরা মূলক তেলাওয়াত করা।আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাত্রে সূরা মূলক তেলাওয়াত করবে সে কবরের আজাব এবং কেয়ামতের দিনের আজাব থেকে মুক্ত থাকবে।
যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে এই সূরা পাঠ করবে কেয়ামতের দিন এই সূরা তার জন্য আল্লাহর নিকট শাফায়াত করবে এবং পাপ মচন করে তাকে বেহেশতে নিয়ে যাবে।নবী (সাঃ) বলেছেন কেয়ামতের দিন এই সূরা তেলাওয়াত কারীর পক্ষে আল্লাহ কাছে তর্ক করবে যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তেলাওয়াতকারী বান্দাকে জান্না্তি বলে ঘোষণা না দেয়।
নবী (সাঃ) বলেন রাত্রি বেলায় যে ব্যাক্তি এই সূরা তেলাওয়াত করিবে আল্লাহ তায়ালা রাত্রিটারে তাঁর জন্য বরকতময় করে দিবেন। এই জন্য নবী (সাঃ) চাইতেন তাঁর উম্মতের অন্তরে এই সূরাটি গাঁথা থাক। তাই তাঁর প্রত্যেক উম্মতের উচিত সূরা মুলক নিয়মিত আমল করা।
রাতে সূরা সেজদাহ তেলাওয়াত করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সমূহের মধ্যে অন্যতম আমল হচ্ছে রাতে সূরা সেজদাহ তেলাওয়াত করা। রাতে সূরা সেজদাহ তেলাওয়াত করা হচ্ছে আমার নবীর সুন্নাহ। নবী (সাঃ) কোনদিন রাত্রে ঘুমাতেন না যতক্ষণ না তিনি সূরা সেজদাহ ও সূরা মূলক তেলাওয়াত করতেন।
নবী (সা:) বলেন যে ব্যক্তি সূরা সিজদাহ ও সুরা মূলক তেলাওয়াত করে রাতে ঘুমাবে আল্লাহ তায়ালা ওই ব্যক্তির আমলনামায় ৭০টা সওয়াব লিখেন এবং ৭০টা গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেন এবং ৭০ টি মর্যাদা ও ব্যক্তির জন্য নির্ধারণ করে দেন। তাই আমাদের প্রত্যেক মুমিন বান্দাদের উচিত প্রতি রাতে সূরা সেজদাহ তেলাওয়াত করা।
রাতে সূরা তাকাসুর তেলাওয়াত করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সমূহের মধ্যে আরো একটি আমল হচ্ছে রাতে সূরা তাকাছুর তেলাওয়াত করা। বিশ্বনবী একবার রাত্রিবেলা শাহবাদের বললেন তোমাদের মধ্যে কে আছো যে রাত্রিবেলা কোরআন শরীফের ১০০০ আয়াত তেলাওয়াত করে ঘুমাবে হাত তুলো। কেউ হাত তুললেন না।
নবী সাল্লাহু সাল্লাম ডানে তাকান ,বামে তাকান ,সামনে তাকান তিনি দেখেন কেউ হাত তুলেন না। বিশ্বনবী বললেন ও আমার সাহাবারা তোমাদের মধ্যে কে কে আছো রাত্রিবেলা সূরা তাকাসুর তেলাওয়াত করে বিছানায় ঘুমাতে যেতে পারবা। এবার সকল সাহাবায় হাত তুললেন।
আরো পড়ুনঃ শুক্রবারের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সম্পর্কে
বিশ্বনবী বললেন তোমরা যদি প্রতি রাতে সূরা তাকাছুর একবার তেলাওয়াত করো তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের আমলনামায় কুরআন শরীফের ১০০০ আয়াত তেলাওয়াত করার সওয়াব লিখে দিবেন। কোরআন মাজিদের ১০০০ আয়াত তেলাওয়াতের সওয়াবের আশায় আমাদের প্রতি রাত্রে ঘুমানোর আগে অবশ্যই সূরা তাকাসুর তেলাওয়াত করা উচিত।
রাতে সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সমূহের মধ্যে আরও একটি বিশেষ আমল হচ্ছে রাতের বেলায় সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা। নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি রাতের বেলায় সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করে ঘুমাবে সারারাত নফল নামাজ আদায় করলে যে সওয়াব হয় সে পরিমাণ সওয়াব সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াতকারী ব্যক্তির আমল নামায় লিখা হবে।
আমরা জানি সারারাত নফল নামাজ আদায় করা একজন মানুষের জন্য অনেক কষ্টকর। ছোট্ট একটি আমলের বিনিময়ে এই কষ্টসাধ্য আমলের সওয়াব আল্লাহ তাআলা আমাদের আমলনামায় দিবেন তাই সকল মুমিন মুসলমান বান্দার উচিত রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে সূরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা।
রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত এর মধ্যে আরেক টি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা। নবী (সাঃ) বলেছেন ঘুমানোর আগে যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পড়বে আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির জন্য একজন ফেরেশতা পাঠাবেন তাকে পাহারা দেওয়ার জন্য। সারারাত ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার হেফাজতে থাকবেন।
কোন বিপদ-আপদ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে, দুষ্টু জিন শয়তানের উৎপাত থেকে, যাদুবিদ্যা কুফরি কালাম থেকে হেফাজত থাকার জন্য আমাদের রাতের বেলা ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে ঘুমাতে হবে।
রাতে তিন কুল পাঠ করে শরীর মাসেহ করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত এর মধ্যে আরো একটি অন্যতম আমল হচ্ছে রাতের বেলায় তিন কুল পাঠ করে শরীর মাসেহ করে ঘুমাতে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, ও সূরা নাস পড়ে হাতে ফু দিয়ে সারা শরীর মাসেহ করে রাতে ঘুমাতে যাবেন সে ব্যক্তিকে দৃশ্য ও অদৃশ্য জগতের কোন ক্ষতি তাকে স্পর্শ করবে না। এটি আল্লাহর তরফ থেকে ওই ব্যক্তির জন্য রক্ষাকবচ। তাই আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমান ব্যক্তির উচিত রাতের বেলায় তিন কুল পড়ে হাতে ফু দিয়ে শরীর মাসেহ করে ঘুমাতে যাওয়া।
রাতে সূরা কাফিরুন পাঠ করা
নবী (সা:) বলেছেন রাতের বেলা কোন ব্যক্তি যদি সূরা কাফিরুন পড়ে ঘুমিয়ে যায় তাহলে ওই ব্যক্তিকে আল্লাহ পাক শিরকের গুনাহ থেকে মুক্ত রাখবেন ইনশাল্লাহ। হাদিস আছে আল্লাহ তা'আলা শিরকের গুনাহ ছাড়া বান্দা সব গুনাহ বান্দা তওবা করলে আল্লাহ তাআলা চাইলে ক্ষমা করে দিবেন।
হাদিসে বর্ণিত হাজারে যে ৯৯৯ জন মানুষ জাহান্নামে যাবে তাদের আমলনামায় মূল পাপ হচ্ছে শিরক। শিরক রত অবস্থায় যদি কোন বান্দা মারা যান তাহলে সে জাহান্নামী। আপনি যদি রাতে সূরা কাফিরুন তেলাওয়াত করে ঘুমান তাহলে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে শিরকের গুনাহ থেকে বাঁচাবেন ইনশাআল্লাহ।
রাতে অজু করে ঘুমাতে যাওয়া
রাতে ঘুমানোর আগে ওযু করা ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন তোমরা তোমাদের শরীরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তোমাদেরকে পরিছন্ন করে দিবেন।
আরো পড়ুনঃ আয়াতুল কুরসি পাঠের ফজিলত সম্পর্কে
যখন আল্লাহর কোন বান্দা ওযু করে বিছানায় ঘুমাতে যায় তখন আল্লাহ তাআলা ঐ বান্দার জন্য একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন ওই বান্দার হয়ে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য। ঘুমের মধ্যে ওই বান্দা যখন নড়াচাড়া করে, কিংবা এপাশ-ওপাশ করে তখন ওই ফেরেস্তা তার জন্য এ বলে দোয়া করে হে আল্লাহ আপনার এই বান্দাকে ক্ষমা করে দিন কেননা সে পবিত্রতা অর্জন করে ঘুমিয়েছে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেন কোন বান্দা যখন অজু করে পবিত্র হয়ে ঘুমাই আর ঘুমানোর পর যদি কোন কারণে রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তবে সে যেন একটু হলেও আল্লাহর জিকির করে। যদি কেউ জিকির করার পর আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে তবে আল্লাহ তায়ালা তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী তাই দিয়ে দেন।
রাতে ঘুমানোর আগে কিছু জিকির করা
রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত সমুহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর জিকির করা। রাতে ঘুমানোর আগে ৩৩ বার সুবহানআল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে আপনার শরীরে শক্তি আসবে। এটা যারা নিয়মিত আমল করবেন আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের শরীরে শক্তি আসবে।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম তার মেয়ে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে এ আমল করা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। ফাতেমা রাদিউল্লাহ তায়ালা আনহু ও আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু নবী সাল্লাল্লাহু সালামের কাছে গিয়ে বলেছিলেন, বাড়ির অনেক কাজ আমরা করতে পারছি না, কাজ করতে ক্লান্ত হয়ে পড়তেছি, আমাদেরকে একজন দাস দাসি দেন।
নবী (সাঃ) বলেছিলেন আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিখিয়ে দিব যা তোমাদের দাস দাসীর অভাব পূরণ করে দিবে বা দাস-দাসীর প্রয়োজন হবে না। তখন নবীজি (সা:) তাদেরকে শিখিয়ে দিলেন ঘুমানোর আগে ৩৩ বার সুবহানআল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়ে ঘুমাবে। ইনসাআল্লাহ তোমাদের দাসদাসীর প্রয়োজন হবে না।
এছাড়াও অনেক এলামায়ে কেরাম এই আমলের অনেক ব্যাখ্যা করেছেন। নিয়মিত এই আমল করলে শরীরে রোগ ব্যাধি কমে, শরীরে শক্তি পাইয়, শরীরে এনার্জি বাড়ে, নিজের কাজ নিজেই করতে পারে ইনশাল্লাহ।
শেষ কথা - রাতের বিশেষ আমল ও এর ফজিলত
মমিন মুসলমানের উচিত রাতে ঘুমানোর আগে উল্লেখিত আমল গুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। রাতে ঘুমানোর আগে ঘুমানোর দোয়া " আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া " পাঠ করে ডান কাৎ হয়ে ঘুমাবেন। এইসব আমল করে ঘুমালে পুরো ঘুমটাই হবে আপনার এবাদত।
ঘুমের মধ্যে যদি আপনি দুঃস্বপ্ন দেখেন তাহলে বাম পাশে আপনি তিনবার থুতু ছিটাবেন। এরপর "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম " বলে পাশ ফিরে ঘুমাবেন। আল্লাহ তায়ালা মুমিন উম্মাহকে রাতের আমল গুলো নিয়মিত করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ পাওয়ার তাওফিক দান করুন। যাবতীয় অনিষ্টতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন, আমীন।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url