শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। রূপচর্চা ও মেদ নিয়ন্ত্রণ সহ নানা উপকারিতা আছে এই সহজলভ্য সবজির। আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় শসা একটি পরিচিত নাম। কারণ বেশিরভাগ শালাদেই ব্যবহার করা হয় এই সবজি। তাছাড়া এতে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে সহায়ক এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থগুলো দূর করে দেয়।
যেহেতু খাবারের তালিকায় শসা যোগ করা খুব সহজ তাই সারা বছরই এটি আপনি খেতে পারেন। শসা খাওয়ার আরো অনেক দুর্দান্ত উপকারিতা রয়েছে। চলুন শসা খাওয়ার উপকারিতা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
পোস্ট সুচিপত্র
- শসা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে
- শসা হজমের সমস্যা দূর করে
- শসা হাড় মজবুত রাখে
- শসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- শসা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
- শসা দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে
- শসা ত্বক বান্ধব খনিজের সরবরাহকারী
- শেষ কথা - শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে
শসা খাওয়ার উপকারিতা গুলোর মধ্যে অন্যতম উপকারিতা হচ্ছে শসা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে। তীব্র গরমে আমাদের শরীরে পানের ঘাটতি তৈরি হতে পারে। এতে ইলেক্ট্রো্লাইটের ভারসাম্য এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। যার ফলে শরীরে নানা সমস্যা তৈরি হয়। এমন অবস্থায় উপকারি একটি খাবার হতে পারে শসা। এতে রয়েছে পর্যাপ্ত পানি। শসাতে প্রায় ৯৫ শতাংশ পানি থাকে।
তাই শসা খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়। সেই সাথে রক্ষা পাওয়া যায় পানি শূন্যতা থেকেও। তাই এই তীব্র গরমে পানির ঘাটতি মেটাতে নিয়মিত শসা খাওয়ার অভ্যাস করুন। এই শসায় গ্রিস্মের তাপ প্রবাহ থেকে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে এবং শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলো দূর করতে সাহায্য করবে।
শসা হজমের সমস্যা দূর করে
গরমে শরীরের যেসব সমস্যা দেখা দিতে পারে তার মধ্যে হজমের সমস্যা অন্যতম। এ সময় খাবার সঠিকভাবে হজম হতে চাই না ফলে পেট ফাঁপা, এসিডিটি, গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এইসব সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারে শসা। এতে পর্যাপ্ত ফাইবার রয়েছে। ফাইবার পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত শসা খেলে পেটের সমস্যা দূর হয়।
এই গরমে হজমের সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত শসা খান। শসাতে রয়েছে ইনসলিউবল ফাইবার যা অন্ত্রে জমে থাকা মলকে বাইরে বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলে হজম সহজ ও স্বাস্থ্যকর হয়। শসাতে আঁশযুক্ত উপাদান থাকায় এটি অন্ত্রের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। এই সবজির ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়ামের মাত্রা পানি ধরে রাখে সেই সঙ্গে অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা ও দূর করে।
শসা হাড় মজবুত রাখে
শসা খাওয়ার উপকারিতা সমূহের মধ্যে আরো একটি উপকারিতা হচ্ছে শসা হাড় মজবুত রাখে। যাদের বয়স একটু বেশি যারা হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা, বাত জনিত নানা রোগে ভুগছেন। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এইসব সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি একটু বেশি। এসব সমস্যা থেকে হাড় ভালো রাখতে আমাদেরকে নিয়মিত শসা খেতে হবে।
কারণ এতে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে। এই ভিটামিন আমাদের শরীরকে ক্যালসিয়াম শোষণ করতে সাহায্য করে। যার কারণে আমাদের হাড় প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম গ্রহণ করতে পারে। কেবল বয়স্কদের জন্য নয় ছোট বড় সবার জন্য শসা একটি উপকারী খাবার। শসায় প্রচুর পরিমাণে সিলিকা আছে।
গাজরের রসের সঙ্গে শসার রস মিশিয়ে খেলে দেহের ইউরিক এসিডের মাত্রা নেমে আসে। এতে গেঁটে বাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়াও ভিটামিন এ, বি1, বি6, বিকে, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শরীরে এসিডের মাত্রা কমিয়ে সন্ধির ব্যথা থেকে মুক্তি দেই ও হাড় শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শসা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শসা খাওয়ার উপকারিতা হচ্ছে শসা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শসাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের সম্ভাবনা কমায়। প্রতিদিন আমাদের শরীরে যেসব ভিটামিনের দরকার তার বেশিরভাগই শসার মধ্যে বিদ্যমান। ভিটামিন এ বি ও সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও শক্তি বাড়ায়।
শসায় যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাঁটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে কিডনিতে সৃষ্ট পাথর ও গলে যায়। ভোরে ঘুম থেকে উঠার পর অনেকের মাথা ধরে, শরীর ম্যাজম্যাজ করে। শসায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি ও সুগার আছে।
তাই ঘুমাতে যাওয়ার আগে শসা খেয়ে ঘুমালে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর এই সমস্যা থাকবে না। তাই আপনার শরীর সুস্থ রাখতে, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অবশ্যই আপনাকে খাদ্য তালিকায় নিয়মিত শসা রাখতে হবে।
শসা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে
শসা খাওয়ার উপকারিতা এর মধ্যে আরও একটি উপকারিতা হচ্ছে শসা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। শসায় ক্যালোরি কম ও পুষ্টিগুণ বেশি। শসা খেলে পেট অনেক ভরা থাকে। এতে ক্ষুধার প্রবণতা কমে। শসাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। ফাইবার আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
শসায় উচ্চ মাত্রায় পানি ও নিম্ন মাত্রায় ক্যালরিযুক্ত উপাদান রয়েছে। ফলে যারা দেহের ওজন কমাতে চান তাদের জন্য শসা আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করে। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তবে স্যুপ ও সালাতে বেশি বেশি শসা ব্যবহার করবেন। কাঁচা শসা চিবিয়ে খেলেও তা হজমে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।
আমরা যখন কেউ ওজন কমাতে চাই তখন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা শসা খাওয়ার পরামর্শ দেন। কারণ ওজন কমানোর জন্য সেরা একটি খাবার হচ্ছে শসা। এটি যে কেবল হজমে সহায়ক তা নয়, সেই সঙ্গে ফাইবার এবং পর্যাপ্ত পানি থাকে এই সবজিতে। এতে কোন ফ্যাট নেই। নিয়মিত শসা খেলে তা শরীর থেকে চর্বি ঝরাতে কাজ করে।
শসা দৃষ্টি শক্তি উন্নত করে
শসা খাওয়ার উপকারিতা সমূহের মধ্যে আরো একটি উপকারিতা হচ্ছে শসা আমাদের দৃষ্টিশক্তিকে উন্নত করে। শসাতে রয়েছে প্রচুর ভিতামিন এ যা আমাদের দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে। শসা তে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। তাই দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে চাইলে এবং চোখের বিভিন্ন সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে আমাদেরকে নিয়মিত শসা খেতে হবে।
সৌন্দর্য চর্চায় অংশ হিসেবে অনেকে শসা গোল করে কেটে চোখের পাতায় বসিয়ে রাখেন। এতে চোখের পাতায় জমে থাকা ময়লা যেমন অপসারিত হয় তেমনি চোখের জ্যোতি বাড়াতেও কাজ করে। শসাতে চোখের প্রদাহ প্রতিরোধক উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকায় চোখে ছানি পড়া ঠেকাতে এটি কাজ করে।
শসা ত্বক বান্ধব খনিজের সরবরাহকারী
শসা খাওয়ার উপকারিতা সমূহের মধ্যে আরেকটি অন্যতম হচ্ছে শসা ত্বক ও চুলের যত্নে খুব কার্যকরী। শসায় উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও সিলিকন আছে যা ত্বকের পরিচর্যায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর জন্য ত্বকের পরিচর্যায় গোসলের সময় শসা ব্যবহার করা হয়।
শসার মধ্যে যে খনিজ সিলিকা থাকে তা আমাদের চুল ও নখ কে সতেজ ও শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়া শসার সালফার ও সিলিকা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই ত্বক সতেজ রাখতে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শসা রাখতে হবে। এছাড়াও শসার রস চোখের নিচের কুঁচকে ও কালো হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
শেষ কথা - শসা খাওয়ার উপকারিতা
শসায় থাকা লিগানন স্তন, জরায়ু ও প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এর মধ্যে থাকা আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেমন ল্যারিকিরসিনল, পিনোরসিনল, সব ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়তে সহায়তা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে শসার একটি উপাদান হল কিউকারবিটাসিন। এর কারণে কিছু শসা খেতে তেতো হয় এবং এর কারণে শসা খাওয়ায় পেটে গ্যাস হতে পারে।
শসা আপনি অন্য যেকোনো খাবারের সঙ্গে যোগ করে খেতে পারেন। যেমন সকালের নাস্তার পর, দুপুরে খাবারের সঙ্গে সালাদ হিসেবে, বিকেলে নাস্তার সঙ্গে টক দইয়ের সঙ্গে কিংবা রাতের খাবারের সঙ্গে। অন্য খাবারের সঙ্গে শসা থাকলে খাবারটা সুস্বাদু হয় এবং খাবারটা আপনার শরীরে ধীরে ধীরে হজম হয়। যা আপনার ওজন ও রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url