আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল

পবিত্র কোরআনুল কারীমের দ্বিতীয় সূরা আল বাকারার ২৫৫ তম আয়াত হচ্ছে আয়াতুল কুরসি। কোরআনুল কারীমের মধ্যে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত এটি। এটি পবিত্র কোরআন শরীফের প্রসিদ্ধ আয়াত। এতে সমগ্র মহাবিশ্বের উপর আল্লাহর জোরালো ক্ষমতা ঘোষণা করা হয়েছে। 

আয়াতুল-কুরসির-ফজিলত-ও-আমল

পুরো আয়াতে আল্লাহর একাত্ত বাদ, মর্যাদা ও গুণের বর্ণনা থাকার কারণে আল্লাহ তায়ালা আয়াতুল কুরসির মধ্যে অনেক ফজিলত রেখেছেন। আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করলে অসংখ্য সওয়াব লাভ হয়। আজকে আমরা আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। চলুন জেনে নেওয়া যাক আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল সম্পর্কে।

পোস্ট সুচিপত্র 


আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল

আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল অনেক। তিরমিজি শরীফের হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে প্রতিটি বস্তুর একটি শীর্ষ চূড়া রয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফের শীর্ষ চুড়া হল সূরা বাকারা এবং সর্দার আয়াত হল আয়াতুল কুরসি।

আবু দাউদ শরীফে হযরত উয়াইলা ইবনে আসকা ( রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে একদা নবী করীম (সা:) মোহাজেরদের জামাতে আগমন করেন, এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আমাদের রাসূল পবিত্র কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত কোনটি মহানবী  (সাঃ) বলেন " আয়াতুল কুরসি"। 

আয়াতুল-কুরসির-ফজিলত-ও-আমল

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে উবাই বিন কাব  (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রয়েছে, রাসূল (সা:) উবাই বিন কাব  (রা:) কে জিজ্ঞেস করেছিলেন, তোমার কাছে কুরআন মাজীদের কোন আয়াতটি সর্ব মহান? তিনি বলেছিলেন আয়াতুল কুরসি। রাসূল (সাঃ) তাঁর পবিত্র হাত দিয়ে তার বুকে মৃদু আঘাত করে বলেছিলেন আবুল মোনজির, এই জ্ঞানের কারণে তোমাকে ধন্যবাদ, কি উত্তম জ্ঞানই না তুমি অর্জন করিয়াছো। 

উপরের  হাদিস গুলো থেকেই বোঝা যায় আয়াতুল কুরসি কত দামি ও ফজিলতপূর্ণ একটি আয়াত। নিচে আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ

আয়াতুল কুরসির আমলে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজতে থাকবেন

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন আয়াতুল কুরসি কুরআনের অন্য সব আয়াতের সরদার বা নেতা। এই আয়াত যে ঘরে তেলাওয়াত করা হবে সে ঘর থেকে শয়তান বের হয়ে যাবে। হাদিসে বর্ণিত আছে যে ব্যক্তি সকালে ও সয়নের পূর্বে আয়াতুল  কুরসি পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং তার তত্ত্বাবধানকারী।

কাজেই সারাদিনের মধ্যে শয়তান তার নিকট ঘেঁষতে পারেনা। কেননা আয়াতুল কুরসি পাঠকারীর নিকট শয়তান আগমন করবে না বলে অয়াদাবদ্ধ রয়েছে।যে ব্যাক্তি সকাল সন্ধ্যা আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করিবে সকালে তেলাওয়াত করিলে সারাদিন এবং সন্ধ্যায় তেলাওয়াত করলে সারা রাত সে শয়তানের অনিষ্ট থেকে হেফাজতে থাকবে।

আয়াতুল কুরসির আমলে সংসারে শান্তি বজায় থাকবে

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি বিছানায় শয়নের সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ঘরে , তাঁর প্রতিবেশীর ঘরে এবং আশে পাশের সব ঘরেই শান্তি বজায় রাখবেন।

অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, যে ব্যক্তি বিছানায় যাওয়ার সময় অর্থাৎ ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তার জন্য একজন প্রহরী নিযুক্ত করা হবে এবং সকাল পর্যন্ত সে নিরাপদে থাকবেন।

ধন-সম্পদ ও পরিবার-পরিজন নিরাপদে থাকে

আবু আইয়ুব আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি আপনাকে একটি বিষয় স্মরণ করাতে চাই । আপনি আপনার ঘরে আয়তুল কুরসি পাঠ  করবেন তাহলে শয়তান বা অন্য কিছু আপনার ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না।

যে ব্যক্তি সফরে রওনা হওয়ার আগে ঘরে আয়তুল কুরসি পাঠ করে ফু দিয়ে বের হবে সফর থেকে ফিরে আসা পর্যন্ত তার সম্পদ ও পরিবার পরিজন নিরাপদে থাকবে। এই হাদিস থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে আয়াতুল কুরসী আমল কারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা সকল প্রকার বিপদ আপদ থেকে হেফাজত করেন ও নিরাপদে রাখেন।

আয়াতুল কুরসি আমলে মৃত্যুর যন্ত্রণা কম হবে

একজন মুমিন মুসলিমের জীবন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুন্দরভাবে অতিবাহিত করার জন্য অনেক দোয়া রয়েছে। তবে মৃত্যুর সময় হযরত আজরাইল আলাইহি সাল্লাম যখন জান কবজ করতে আসবেন তখন মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে কষ্ট হবেই। তবে মহান আল্লাহ তায়ালার মুমিন বান্দারা সেই কষ্টটা কম পেয়ে থাকেন।


হাদিসে আছে কুরআনে বর্ণিত আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করলে মৃত্যুর যন্ত্রণা হালকা হবে। তাছাড়াও হাদিসে রয়েছে আয়াতুল কুরসি প্রত্যহ অধিক বার পাঠ করলে পাঠকারীর কবরের আজাব মাফ হয়ে যাবে। তাই আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমান ব্যক্তিদের উচিত বেশি বেশি আয়াতুল কুরসি আমল করা।

আয়াতুল কুরসি আমলে আল্লাহর কাছে প্রশংসা ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে

রাসূল (সা:) বলেছেন আল্লাহর কসম, যার হাতে আমার প্রাণ আয়তুল কুরসির একটি জিব্বা ও দুটি ঠোট রয়েছে। এটি আরশের পায়ার কাছে আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করতে থাকে।হাদিসে ওযুর পর আয়াতুল কুরসি পড়ার তাগিদ রয়েছে। ওজুর পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে আল্লাহর নিকট আমলকারী বান্দার মর্যাদা ৭০ গুণ বৃদ্ধি পায়। তাই আল্লাহর কাছে আমাদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আমাদের আয়াতুল কুরসি বেশি বেশি তেলাওয়াত করতে হবে।

আয়াতুল কুরসির আমলে জান্নাত লাভ হবে

আবু উমামাহ (রা:) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুলে কারিম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোন বাধা থাকবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এই আমল করা কঠিন কিছু না। আমাদের প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা।

আমরা অনেকেই আয়তুল কুরসি মুখস্ত পারি। আর যারা পারি না তারাও মুখস্ত করে নিতে পারেন। আপনাদের মুখস্ত করার সুবিধার্থে নিচে আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ তুলে ধরা হলোঃ

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ

আয়াতুল-কুরসির-ফজিলত-ও-আমল

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম-
আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম লাতাখুযুহু সিনাতু ওয়ালা নাউম, লাহু মা ফিস সামাওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ, মান জাল্লাজি  ইয়াস ফাউ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি ইয়া লামু মা বাইনা আইদিহিম অয়ামা খালফাহুম,ওয়ালা ইউহিতুনা বিশাই ইম মিন ইল মিহি ইল্লা বিমা শা আ , ওয়াসিয়া কুরসি ইউহুস সামা ওয়াতি ওয়াল আরদ, ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলি য়্যুল আজিম।

আয়াতুল কুরসির বাংলা অর্থ

আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক, তাঁকে তন্দ্রা ও নিন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না, আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে সবই তাঁর, কে আছে এমন যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া,দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে তা সবই তিনি জানেন, তাঁর জ্ঞান সীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারেনা, তাঁর আসন ও সাম্রাজ্য সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে, আর এগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়, তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান।

শেষ কথা- আয়াতুল কুরসির ফজিলত ও আমল 

পবিত্র কুরআনুল কারীমের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হল আয়াতুল কুরসী। আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ পাকের ইসমে জাত ও ইসমে সিফাতের অপূর্ব সমাবেশ রয়েছে। প্রভুত্ব, একত্ববাদ, জীবন, জ্ঞান, স্থায়িত্ব, অধিকার, কুদরত, অভিপ্রায় ইত্যাদি গুণাবলীর বর্ণনা এর মুল প্রতিপাদ্য বিষয়। 

আয়াতুল কুরসির মর্ম সম্পর্কে যদি চিন্তা করি তাহলে বুঝতে পারবো এ আয়াতে আল্লাহতালার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর পরিচয় লাভের চেয়ে বড় জিনিস মানুষের জন্য আর কি হতে পারে। এই জ্ঞানই তো সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান, আর এ বিষয়ে অজ্ঞতাই সবচেয়ে ভয়াবহ অজ্ঞতা।

প্রত্যেক মানুষের উচিত আল্লাহ তায়ালার পরিচয়, তাঁর সৃষ্টি জগত সম্পর্কে নিখুঁতভাবে জানা বোঝা এবং তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করা। আল্লাহ তায়ালা তাঁর সমস্ত বান্দাকে তা জানার বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url