চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় অনেক রয়েছে। আমাদের চুলে শীতকালে খুশকির প্রকোপ বেড়ে যায়। এ সময় শুষ্ক মাথার ত্বকের কারণে চুলকানিও হয় বেশি। শুষ্ক আবহাওয়া, ঠান্ডা বাতাস এবং ম্যালাসেমিয়া ছত্রাকের প্রকোপের কারণে শীতের মৌসুমী অন্যান্য সময়ের চাইতে খুশকি উপদ্রব বেড়ে যায় ।

চুলের-খুশকি-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
এন্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও বারবার ফিরে আসে খুশকি। ঘরোয়া উপায়ে খুশকি দূর করার কিছু চেষ্টা আমরা করতে পারি। এতে যেমন চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে তেমনি কোন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়ায় খুশকি দূর হবে। চলুন চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নিই।

পোস্ট সুচিপত্র


চুলের খুশকি দূর করতে মুলতানি মাটির ব্যবহার

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহের মধ্যে চুলে মুলতানি মাটির ব্যবহার অন্যতম। মুলতানি মাটি খনিজ এবং পুষ্টির একটি সমৃদ্ধ উৎস। যা যে কোন ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ও খুশকি দূর করতে দুর্দান্ত কাজ করে। পাশাপাশি চুলের ফলিকলকে ও অনেক শক্তিশালী করে তুলে এই মুলতানি মাটি।

আপনি মুলতানি মাটির সঙ্গে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর এই পেস্ট চুলের গোড়ায় কয়েক মিনিট ধরে ম্যাসাজ করুন। এরপর আধাঘন্টা রেখে হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এতে করে আপনার চুল থাকবে খুশকি মুক্ত ও ঝরঝরে।

চুলের খুশকি দূর করতে এলোভেরার কার্যকারিতা

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় এর মধ্যে চুলে এলোভেরার ব্যবহার খুব কার্যকরী। অ্যালোভেরা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং শুষ্ক ও ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে পুনরুজ্জীবিত করে। এটি খুশকির সমস্যা কমাতেও কার্যকর। এলোভেরা চুলে মশ্চারাইজিং এর কাজ করে। এটি চুলে নিয়মিত ব্যবহারে চুল মোলায়েম ও ঝলমলে থাকে।

অ্যালোভেরার জেল তৈরি করে চুলের গোড়ায় ও স্কাল্পে ভালোভাবে ঘোষে ম্যাসাজ করুন। এই জেল এক ঘন্টা লাগিয়ে রেখে শ্যাম্পু করে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন এলোভেরা জেল চুলে লাগাবেন। নিয়মিত এলোভেরা জেল চুলে লাগালে ধীরে ধীরে খুশকির প্রকোপ দূর হবে।

চুলের খুশকি দূর করতে লবণের ব্যবহার

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহের মধ্যে লবণ মিশ্রিত শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার অন্যতম। আপনি শ্যাম্পুতে এক চা চামচ লবণ মিশিয়ে তাতে কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন । এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় ও স্কাল্বে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।

আধাঘন্টা রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। চুল ধুয়ে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। আপনি সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন লবণ শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করুন। দেখবেন নিয়মিত লবণ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুলের খুশকি দূর হয়ে গেছে।

চুলের খুশকি দূর করতে আপেল সিডার ভিনেগারের ব্যবহার 

আপেল সিডার ভিনেগার চুলে ব্যবহার চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমুহের মধ্যে আরও একটি। আপেল সিডার ভিনেগার ও সমপরিমাণ পানি মিক্সড করে মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। আধাঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।

খুশকির প্রকোপ বেড়ে গেলে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার চুলে  আপেল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করবেন দেখবেন খুশকির প্রকোপ থেকে রেহায় পেয়ে যাবেন।

চুলের খুশকি দূর করতে মেথির ব্যবহার 

চুলের যত্নে ও চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমুহের মধ্যে মেথির ব্যবহার অন্যতম।  মেথি চুলের খুশকি দূর করার জন্য খুব উপকারি। এতে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। এতে আরও আছে বায়োটিন, সেলেনিয়াম ও জিংক। এই উপাদান গুলো চুলের জন্য খুব উপকারী।
চুলের-খুশকি-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
মেথি চুল পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে ও চুলে খুশকি দূর করতে কাজ করে। মেথি ও মেথি ভেজানো পানি দুই কাজ করে।সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে তা ব্লেন্ড করে তাতে ২ টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এরপর সমস্ত মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রেখে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।

চুলের খুশকি দূর করতে লেবুর ভূমিকা

চুলের খুশকি দূর করতে লেবুর কোন জুড়ি নেই। চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহের অন্যতম। আপনি তিন চামচ লেবুর রস ও এক চামচ নারিকেল তেল একসাথে মিশিয়ে চুলের গোড়ায় ও স্কাল্বে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। বেশ কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করবেন। এতে স্কাল্বে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে।

এরপর এক ঘন্টা রেখে ধুয়ে ফেলবেন। আপনি চাইলে প্রতিদিন গোসলের আগে চুলের গোড়ায় লেবুর রস লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে গোসল করে নিতে পারেন। এভাবে চুলে লেবুর রস ব্যবহার করলে আপনার চুল অবশ্যই খুশকি মুক্ত  থাকবে।

চুলের খুশকি দূর করতে নিম পাতার ব্যবহার

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহের মধ্যে আরও একটি ঘরোয়া উপায় হচ্ছে চুলে নিম পাতার ব্যবহার। নিম পাতায় রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা চুলের খুশকি দূর করে। এর এন্টিফাঙ্গাল উপাদান ও স্কাল্ব ভালো রাখে।

কয়েকটি নিমপাতা বেটে তাতে অলিভ অয়েল তেল মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট সমস্ত মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর এক ঘন্টা রেখে ভালো ভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি চুলে খুশকির প্রকোপ বেশি থাকে তাহলে সপ্তাহে অন্তত একবার নিমপাতার পেস্ট মাথায় লাগাবেন। দেখবেন খুশকির প্রকোপ কমে গেছে।

চুলের খুশকি দূর করতে চা পাতি ও গ্রিন ট্রি ব্যবহার

গ্রিন ট্রি ব্যাকটেরিয়া রোধী উপাদান। গ্রিন ট্রির নির্যাস চুলে নিয়মিত ব্যবহার করলে চুল খুশকি মুক্ত থাকবে। চাপাতি কিংবা গ্রিন ট্রি এক লিটার পানিতে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিবেন। এরপর  ফুটানো পানি ছেঁকে নিবেন।
চুলের-খুশকি-দূর-করার-ঘরোয়া-উপায়
ফুটানো পানি সমস্ত চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিবেন।কয়েক মিনিট রেখে স্যাম্পূ দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। এরপর  চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একদিন গ্রিন টি কিংবা চাপাতি ফুটানো পানি দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুল যেমন থাকবে খুশকি মুক্ত তেমনি থাকবে ঝলমলে।

চুলের খুশকি দূর করতে টি ট্রি অয়েলের ব্যবহার

টি ট্রি ওয়েল প্রাকৃতিক ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস্ নাশক। একে যাদুকরী এসেন্সিয়াল অয়েল ও বলা হয় যা চুলের খুশকি দূর করতে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখে। যেকোনো নারিকেল তেলের সঙ্গে কিংবা অলিভ অয়েল তেলের সঙ্গে এক চামচ টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে হালকা কুসুম গরম করে নিবেন।

এরপর আঙ্গুলের সাহায্যে এই হালকা কুসুম গরম অয়েল মাথার পুরো স্কাল্বে ভালোভাবে মাসাজ করবেন। এতে স্কাল্বে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে সেই সাথে মাথার ত্বক ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস থেকে মুক্তি পাবে। এইভাবে টি ট্রি অয়েল চুলে ম্যাসাজ করলে কয়েকদিনের মধ্যে খুশকি দূর হয়ে যাবে।

চুলের খুশকি দূর করতে ওটস প্যাকের অবদান 

ওটস এ আছে সাপোনিন যা একটি প্রাকৃতিক ক্লিনজার। মাথার তেল চিটচিটে ভাব দূর করার সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতে পারে মৃত  কোষ। এর এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান খুশকি ও চুলকানি সমস্যা সমাধানে বেশ সহায়তা করে। লিপিড আর প্রোটিনের সমৃদ্ধ বলে ওটস মাথার ত্বকে পুষ্টি যুগিয়ে একে মসচারাইজ করে।

২ চা চামচ ওটস অল্প পানিতে ভিজিয়ে তাতে ২ চা চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্ট সমস্ত চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে দিন। এক ঘন্টা রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। চুল খুশকি মুক্ত রাখতে মাঝে মধ্যেই ওটসের এই প্যাক চুলে লাগাবেন।

চুলের খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের ভূমিকা

চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় সমূহের মধ্যে আরও একটি কার্যকারী উপায় হচ্ছে চুলে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করা। পেঁয়াজের রসে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা চুলে খুশকির সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

একটি কিংবা দুইটি পেঁয়াজ ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিবেন। এরপর ছেকে রস বের করে নিবেন। এতে এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে ভালোভাবে আঙ্গুলের সাহায্যে সমস্ত স্কাল্বে মাসাজ করবেন। এক ঘন্টা পর ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নেবেন। সপ্তাহে একদিন পেঁয়াজের রস চুলে লাগাবেন এতে চুল খুশকি মুক্ত থাকবে সেই সাথে চুল বৃদ্ধি পাবে।

শেষ কথা-চুলের খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়

সাদা সাদা খুশকি যখন মাথা থেকে ঝড়ে ঘাড়ের কাপড়ের জমে তখন প্রত্যেকেই এক ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। দৈনন্দিন মেলামেশা, অফিস আদালতে কাজকর্ম, সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদান, এমনকি প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা করা সব ক্ষেত্রেই এই বিব্রতকর খুশকি দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

খুশকি হওয়ার মূল কারণ হলো ফাঙ্গাল ইনফেকশন ম্যালাসেজিয়া নামক একটি ফাঙ্গাসের কারণে মূংচুলে খুশকি হয়। এছাড়া স্কাল্পে কোন গুরুতর সমস্যার কারণে খুশকি হতে পারে। একজনের চিরুনি অন্যজন ব্যবহার করলে, নিয়মিত চুল পরিষ্কার না রাখলেও খুশকি হয়ে থাকে। এছাড়াও মাথার ত্বকে ঘাম জমার কারণেও খুশির সমস্যা বেড়ে যায়।

খুশকি দূর করতে আপনাকে অবশ্যই মাথার ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করার পাশাপাশি সুষম খাবার খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করবেন আর মানসিকভাবে প্রফুল্ল থাকার চেষ্টা করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url