হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার কারণ
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে আমরা কেন হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাবো অর্থাৎ হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে। হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের পুষ্টিগুণ অনেক। এটি প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। শিকড়ের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
এর ফলে এটি আমাদের শরীরকে শক্তি প্রদান করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।এছাড়া, হাতিশুঁড়ের শিকড় খাওয়া একটি প্রাচীন রীতি, যা আমাদের পূর্বপুরুষদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এই শিকড়কে শক্তিবর্ধক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা দুর্বলতা বা অন্যমনস্কতার শিকার, তারা সাধারণত এই শিকড় খেয়ে উপকার পান।
হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম জানার আগে চলুন জেনে নিই হাতিশুঁড় গাছের উপকারিতা সম্পর্কে। বহু গুণে সমৃদ্ধ এই গাছের অনেক উপকারিতা রয়েছে যা নিচে তুলে ধরা হলোঃ
ফোলা ও ব্যাথা নিরময় করেঃ বিষাক্ত কোন প্রকার কামড়ে শরীরের কোন স্থান ফুলে গেলে এবং সেই স্থানে জ্বালাপোড়া হলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা বেটে রস লাগালে উপকার পাওয়া যায়। আঘাত জনিত ব্যথায় হাতিশুঁড় গাছের পাতা বেটে অল্প গরম করে লাগালে ফোলা এবং ব্যথা দুটোই কমে যায়।
ঠান্ডা লেগে আপনার হাতে পায়ের গাঁট ফুলে গেলে বা ব্যথা হলে আপনি হাতিশুঁড় গাছের পাতা বেটে হালকা গরম করে আক্রান্ত জায়গায় লাগাবেন দেখবেন ফোলা ও ব্যথা দুটোই কমে গেছে।
ছত্রাক জনিত সংক্রমণ দূর করেঃ যাদের শরীরে ছত্রাকজনিত সংক্রমণের কারণে লাল চাকা চাকা দাগ হয় তারা হাতিশুঁড় গাছের পাতার রস আক্রান্ত স্থানে লাগাবেন এতে ভালো ফল পাবেন। অ্যাকজিমা থেকে মুক্তি পেতে হাতিশুঁড় গাছের পাতা থেঁতলে আক্রান্ত স্থানে কিছুদিন নিয়মিত ব্যবহার করলে অ্যাকজিমা থেকে মুক্তি পাবেন।
সর্দি ও টাইফয়েড রোগের মহা ঔষধঃ সর্দি লাগলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ছেঁচে ২ চামচ পরিমাণ রস খেলে সর্দি ভালো হয়। টাইফয়েড রোগে হাতিশুঁড় গাছের পাতা হতে পারে কার্যকরী সমাধান। এর পাতার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে টাইফয়েড ভালো হয়। আপনার জ্বর ও কাশিতে হাতিশুঁড় গাছের পাতার মূল পানির সঙ্গে ফুটিয়ে খাবেন। এর ফলে আপনার জ্বর ও কাশি ভালো হবে।
ব্রণের সমস্যা ও ব্রনের দাগ দূর করেঃ আপনার ব্রণ হলে বা স্কিনে ব্রণের দাগ হয়ে গেলে হাতিশুঁড় গাছের পাতা ও তার কচি ডাল থেঁতো করে দুপুরে গোসল করার আগে এক ঘন্টা ব্রণের উপর প্রলেপ দিয়ে রাখবেন। এরপর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলবেন। এতে করে আপনার ব্রণ ভালো হবে এবং ব্রণের দাগও সেরে যাবে। এছাড়াও কাঁটা ছেড়া ও আঘাত প্রশমনে এ গাছের ব্যবহার রয়েছে।
শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করেঃ হাতিশুঁড়ের শিকড় শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। হাতিশুঁড় গাছের শিকড় বিভিন্ন শারীরিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের সুস্থ রাখতে সহায়ক।
শরীরে মেটাবলিজম উন্নতি করেঃ হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের খাদ্য গ্রহণ আমাদের শরীরের মেটাবলিজমকে উন্নত করে, যা আমাদের শরীরে জমা চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
আমরা এখন হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানব। হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার জন্য প্রথমেই আপনাকে একটি পূর্ণবয়স্ক হাতিশুঁড় গাছ সংগ্রহ করতে হবে অর্থাৎ গাছে ফুল হয়েছে এবং পাতা সামান্য হলুদাভাব এমন একটি পূর্ণবয়স্ক হাতিসুড় গাছ সংগ্রহ করবেন। এরপর এ গাছের মূল অর্থাৎ শিকড় আপনি খুব ভালোভাবে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার জন্য আপনার তিনটি উপকরণ প্রয়োজন হবে। যেমন মধু, পান এবং কালোজিরা। হাতিশুঁড় গাছের শিকড় 1 ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নিবেন। এই কর্তনকৃত শিকড়টি এবং কালোজিরা একটি পানের ভেতরে নিয়ে ভাজ করে পান খাওয়ার মত করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবেন। এটি যদি আপনি ঘুমানোর এক ঘন্টা আগে খান তাহলে ভালো উপকার পাবেন।
তাছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস পানি খেয়ে হাতিশুঁড় গাছের শিকড় 2 ইঞ্চি পরিমাণ নিয়ে মধুর সাথে মিক্সড করে চিবিয়ে রস খেয়ে ফেলবেন। এটাও বেশ কার্যকরী।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম আরো রয়েছে। এই শিকড়টি ভালোভাবে পরিষ্কার করে তা শুকানোর প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে হবে। এরপর তা গুঁড়া করে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। শিকড়টিকে ফুটিয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। এর ফলে এর পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং সহজেই হজম হয়।
হাতিশুঁড়ের শিকড়ের চা বানিয়েও খাওয়া যায়। এটি শরীরের জন্য খুব উপকারী এবং স্বাদেও আকর্ষণীয়। তাছাড়া হাতিশুঁড় গাছের শিকড় সিদ্ধ করে, ভেজে বা রান্না করেও খাওয়া যেতে পারে। তবে সাধারনত এই গাছের শিকড় প্রথমে সিদ্ধ করে ভেজে খাওয়া ভালো।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় প্রস্তুতির প্রক্রিয়া
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা জেনেছি এবার হাতিশুঁড় গাছের শিকড় প্রস্তুতির প্রক্রিয়াও আমাদের জেনে রাখা জরুরী।হাতিশুঁড় গাছের শিকড় প্রস্তুতির জন্য প্রথমে শিকড়গুলো ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর সেগুলো কেটে বা ছোট টুকরো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
শুকানোর পর, এটি গুঁড়া করে অনেক দিন রাখা যেতে পারে।এই গুঁড়োকে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি দুধ বা ফলের জুসের সঙ্গে এটি মিশিয়ে নিয়মিত খেতে পারবেন। তাছাড়া এই গুঁড়ো দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারবেন।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের প্রভাব
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানার আরেকটু বিশেষ অধ্যায় হচ্ছে এই গাছের শিকড়ের প্রভাব সম্পর্কে জানা।হাতিশুঁড়ের শিকড় খাওয়ার পর তা শরীরে কি ধরনের প্রভাব ফেলে তা জানা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, এটি শরীরকে তাজা এবং চনমনে রাখে।
কিছু ক্ষেত্রে, যারা নিয়মিত এটি খায়, তারা মানসিক চাপ মুক্ত থাকার অনুভূতি পায়।তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়, কারণ তা কিছু ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে, যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের সংরক্ষণ
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম এর মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এ গাছের শিকড়ের সংরক্ষণ করা।হাতিশুঁড়ের শিকড়ের গুণাগুণ বজায় রাখতে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। শুকনো জায়গায় এবং বায়ু প্রবাহিত স্থানে এটি রাখা উচিত। প্লাস্টিকের ব্যাগে না রেখে কাচের জারে রাখলে দীর্ঘ সময় ভালো থাকবে।
এছাড়া, গুঁড়ো করার পর তা সঠিকভাবে বন্ধ করে রাখলে মাটির গন্ধ এবং পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।হাতিশুঁড় গাছের শিকড়ের ব্যবহার শুধু খাদ্য হিসেবে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিভিন্ন প্রথাগত চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, হার্বাল টোটকা এবং টিস্যু তৈরি করতে।এছাড়া, বিভিন্ন খাবারে স্বাদ বৃদ্ধির জন্যও এটি ব্যবহৃত হয়। এর গন্ধ এবং স্বাদ অনেকের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়।
শেষ কথা - হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম, শিকড় খাওয়ার কারণ এবং এই গাছের উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত।হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়া একদিকে যেমন শরীরের জন্য উপকারী, অন্যদিকে এটি একটি প্রাচীন রীতি হিসেবে পরিচিত।
হাতিশুঁড় গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম ও এর নানা উপকারিতা এবং সহজ প্রক্রিয়া আমাদেরকে এই শিকড় খাওয়ার দিকে আকৃষ্ট করে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য এটি একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে। তবে, অবশ্যই সঠিক পরিমাণ এবং পদ্ধতিতে এর ব্যবহার করতে হবে।
সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url