ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় অনেক রয়েছে।চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আমাদের একটু তো পরিশ্রম করতেই হবে। ঝলমলে চুল কেনা চায়। তবে খুব বেশি খাটনির দরকার নেয়। পার্লারে গিয়ে এত এত টাকা খরচ করার দরকার নেয়। তাহলে আমরা কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নিব। চলুন জেনে নিই।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে খাবার যেমন আমাদের শক্তি যোগায় ঠিক তেমনি চুলেরও শক্তি জোগাতে প্রয়োজন চুলের সঠিক খাবার। সঠিক পুষ্টির অভাবে চুল যেমন রুক্ষ হয়ে যায় তেমনি চুলের বৃদ্ধি থেকে শুরু করে চুল পড়ে যাওয়া, আগা ফাটা, চুল ভেঙ্গে যাওয়া, খুশকি জাতীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। চুলের যত্ন নিলেই আমরা পেতে পারি এসব সমস্যা থেকে পরিত্রান। 

চুলের যত্নে গরম তেল মালিশের উপকার

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গরম তেল মালিশ। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়মিত গরম তেল মালিশ করলে স্কাল্পে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়। রক্ত সঞ্চালন ভালো হলে চুলের গোড়ায় অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক হয়। চুলে পুষ্টির কোন অভাব হয় না ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি হয়। চুলের গোড়া হয় মজবুত।

আপনি একটি পাত্রে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল নিন। তা হালকা আঁচে গরম করে নিন। তুলো দিয়ে কিংবা আঙ্গুল দিয়ে চুলের গোড়ায় ও স্কাল্পে ভালো করে এই তেল লাগিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে আঙ্গুল দিয়ে মালিশ করুন। সামান্য চাপ দিয়ে কিছু সময় ম্যাসাজ করুন।

নারিকেল তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েল্, আমন্ড অয়েল কিংবা কাস্টার্ড অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। অলিভ অয়েল চুলকে সিল্কি করে থাকে। আমান্ড অয়েল চুলের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবং কাস্টার্ড অয়েল ব্যবহারে ফলে নতুন চুল গজিয়ে থাকে। আপনি একসাথে একাধিক তেল মিক্সড করেও ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের যত্নে কন্ডিশনার ব্যবহার এর প্রয়োজনীয়তা 

আমরা সবাই লক্ষ্য করে থাকি চুলের ডগা দিনের পর দিন পাতলা হতে থাকে। চুল ডগা থেকে ভেঙে পড়ে। কারণ আমাদের চুলের গোড়া যেভাবে পুষ্টি পায় ডগা পর্যন্ত একইভাবে পুষ্টি পৌছায় না। আর এই কারণে আমাদের চুলের ডগা ভেঙে পড়ে, ধীরে ধীরে পাতলা ও শুরু হয়ে থাকে।

আপনি সপ্তাহে অন্তত তিনবার শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করবেন। প্রতিবার শ্যাম্পু করার পর চুলের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত ভালোভাবে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। এরপর এক মিনিট রেখে ভালোভাবে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে করে আপনার চুলের ওপর একটি সুরক্ষার স্তর যোগ হবে। চুল হবে সিল্কি ও চুল ভেঙ্গে পরবেনা। আপনার চুল তাড়াতাড়ি লম্বাও হবে।

চুলের যত্নে লেবুর রসের কার্যকারিতা

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় এ লেবুর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আমরা অনেকেই জানিনা লেবুর রস দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন নেব।লেবুর রস এ প্রচুর ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা চুল পড়া বন্ধ করতে,মাথার ত্বকে পুষ্টি জোগাতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। হেয়ার প্যাক হিসেবে নিয়মিত লেবুর রস ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয় পাশাপাশি খুশকি দূর করতে লেবুর কোন জুড়ি নেই।

আপনি একটি পাত্রে এক চামচ নারিকেল তেলের সাথে একটি বা দুইটি আস্ত লেবুর রস মিশিয়ে নিন। তা আঙ্গুলের সাহায্যে মাথার ত্বকে হালকা করে মাসাজ করুন। এরপর পুরো চুলে ও ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল থাকবে ঝরঝরে  সিল্কি। তাছাড়া যে কোনো প্যাকের সাথে লেবুর রস মিশিয়েও তা ব্যবহার করতে পারেন।

চুলের যত্নে এলোভেরার ব্যবহার

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় এ এলোভেরা জেল খুব কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এলোভেরা জেল চুলের ময়েশ্চারাইজার বজায় রাখে। এই জেল চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এলোভেরা জেল চুলে কন্ডিশনারের কাজ করে। চুল নরম, মোলায়েম এবং উজ্জ্বল রাখে। চুলের রুক্ষ ও শুষ্কতা ভাব দূর করে।

এছাড়া আপনি এলোভেরা প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এক মুঠো মসুর ডাল ভিজিয়ে রেখে তাতে এলোভেরা ও পাকা কলা দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এক ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল থাকবে ঝলমলে ও মজবুত।

চুলের যত্নে ডিমের হেয়ার মাক্স এর উপকারিতা 

চুলের যত্নে ডিমের হেয়ার মাক্স খুব উপকারী। ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম। চুলের জেল্লা ফেরানোর জন্য ঘরোয়া রুপ টানে এই হেয়ার মাক্সের যথেষ্ট কদর রয়েছে। ডিমের হেয়ারমাক্স আপনার চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করবে। আমরা সবাই জানি ডিমে ভরপুর প্রোটিন রয়েছে। যা আপনার চুলে পুষ্টি যোগায়।

আপনি একটি পাত্রে  ডিম নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিন। এবার এক চামচ নারিকেল তেল দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ ভালোভাবে আপনার  স্কাল্ভে ও চুলে  ভালোভাবে লাগিয়ে নিন এরপর এক ঘন্টা রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন।সপ্তাহে অন্তত একবার এই হিয়ার মাক্স আপনার চুলে লাগাতে পারেন। যার ফলে আপনার চুল হবে স্বাস্থ্য উজ্জল ও ঝলমলে।

চুলের যত্নে মেহেদি পাতার উপকারিতা

চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য মেহেদী পাতা খুবই উপকারী। ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম।  চুলের খুশকি, রুক্ষতা, শুষ্কতা, অকালপক্বতা দূর করে মেহেদী পাতা। মেহেদি পাতা মাথার  ত্বক ঠান্ডা করে ও খুশকি দূর করে।এছাড়া মেহেদি পাতা চুলের বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। চলুন জেনে নিন মেহেদি পাতা দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন নিবেন। 

আপনি গাছ থেকে মেহেদী পাতা নিয়ে তা পেস্ট করে সরাসরি মাথায় লাগাতে পারেন। ঘন্টা খানেক রাখার পর তা ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া মেহেদী গুঁড়োর সঙ্গে পুরো একটা লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট করে তা চুলে ও মাথায় ভালোভাবে লাগাতে পারেন। এরপর ঘন্টা খানেক রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল পড়া কমবে ও চুল ঝরঝরে হবে।

চুলের যত্নে পেঁয়াজের ভূমিকা

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় এ পেঁয়াজের রসের অনেক ভূমিকা রয়েছে।চুল পড়া কমিয়ে মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে পেঁয়াজের রস। পেঁয়াজে  আছে সালফার যেটি চুল ভালো রাখতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। যাদের প্রচুর চুল পড়ে তাদের জন্য পেঁয়াজের রস চুলের ব্যবহার করা খুব জরুরী।

আপনি কয়েকটা পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার সবটুকু মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। ভালোভাবে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একবার মাথায় লাগাবেন  পেঁয়াজের রস। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে। নিয়মিত ব্যবহারে চুল হবে ঘন ও ঝলমলে।

চুলের যত্নে আমলকির গুরুত্ব 

চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য আমলকির রস খুব গুরুত্বপূর্ণ।আমলকির রস চুলের ফলিক গুলো শক্তিশালী করে চুলকে মজবুত করে। দ্রুত চুল বাড়তে সাহায্য করে। এটি মাথার ত্বক ও চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। আমলকি মাথার ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে ও ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুল দেখতে ঘন কালো ও মসৃণ হয়।

কয়েকটি আমলকি ব্লেন্ড করে এর রস কিংবা পুরো পেস্ট মাথায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ঘন্টা খানেক বা অধিক সময় রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন আমলকির রস দিয়ে চুল পরিষ্কার করলে চুলের পাকা ভাব কমে ও চুল পড়া বন্ধ হয়।

 চুলের যত্নে মেথির উপকারিতা 

মেথি চুলের জন্য খুব উপকারি।  ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম।এতে শর্করা, প্রতিন, চর্বি, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার ও ম্যাগনেসিয়াম আছে। এতে আরও আছে বায়োটিন, সেলেনিয়াম ও জিংক। এই উপাদান গুলো চুলের জন্য খুব উপকারী। মেথি চুল পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে কাজ করে। মেথি ও মেথি ভেজানো পানি দুই কাজ করে।

সারারাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালে পানিটা আলাদা করে নিন। সে পানি স্প্রে বোতলে ভরে চুলে লাগালে নতুন চুল গজায়, চুল ভালো থাকে। মেথি গুঁড়া করে প্রতি সপ্তাহে একদিন মাথায় লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয়, চুল পড়া বন্ধ হয় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়।

চুলের যত্নে হেনা প্যাক এর ব্যবহার

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় সমূহের মধ্যে অন্যতম আরো একটি উপায় হচ্ছে চুলে হেনা প্যাক ব্যবহার করা। বহুযুগ আগে থেকে মা দাদীরা চুলে হেনা প্যাক ব্যবহার করে আসছে। পাকা চুল লুকোতে বা চুলের রং করার জন্য হেনা প্যাক ব্যবহার করা হয়। হেনা প্যাক ব্যবহারে আপনার চুল রেশমের মতো নরম ও মসৃণ হবে।

আপনি সপ্তাহে একদিন আমলা পাউডারের সাথে হেনা প্যাক মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর ১ ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এতে আপনার চুল যেমন হবে মজবুত তেমনি হবে মসৃণ ও কোমল।

চুলের যত্নে ভিটামিন ই ক্যাপ এর ব্যবহার

আমরা অনেকে জানি না ভিটামিন ই ক্যাপসুল দিয়ে কিভাবে চুলের যত্ন নিব। চলুন জেনে নিই। ভিটামিন ই ক্যাপসুল এ রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই ক্যাপে টুকেফেরোল রয়েছে যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে আছে এন্টিফাঙ্গাল ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান। এগুলো মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।

আপনি এক টেবিল চামচ নারিকেল তেল, এক টেবিল চামচ আমান্ড তেল, এক টেবিল চামচ কাস্টারড তেলও নিতে পারেন। সাথে একটি কিংবা দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে  তা ভালোভাবে  স্কাল্বে ও  চুলে লাগিয়ে নিন। পরদিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন সপ্তাহে কমপক্ষে দুইদিন এটি ব্যবহার করলে রুক্ষ চুলে প্রাণ ফিরে পাবেন।

শেষ কথা- ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায়

ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন নেওয়ার উপায় আরও রয়েছে। অনেকে ঘুমানোর আগে শক্ত করে বেনি করেন। মনে রাখবেন শক্ত করে বেনী করলে চুল ভেঙে যাওয়া কিংবা ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেনিসক্ত করে না করে কিছুটা হালকা ভাবে করতে হবে এতে চুল কুঁকড়ে যাবে না।

গোসলের আগে অবশ্যই চুল আঁচড়িয়ে নিবেন। গোসলের পর গামছা বা তাওয়েল দিয়ে শক্ত করে চুল বেঁধে রাখবেন না । ভেজা চুল কখনো আঁচড়াবেন না। চুল শুকিয়ে গেলে আঁচড়িয়ে নিবেন। চুলে অতিরিক্ত তেল দিবেন না। অল্প তেল দিয়ে হালকা করে আঙ্গুলের সাহায্যে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url