শিশুর মেধা বিকাশে করনীয়

 শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় অনেক রয়েছে। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুর বুদ্ধি একটি মানসিক ক্ষমতা। শিশু জন্ম থেকে সব বুদ্ধি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে মেধার বিকাশ হতে থাকে।


 আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তান তীক্ষ্ণবুদ্ধি সম্পন্ন ও মেধাবী হোক। শিশুকে মেধাবী বানানোর জন্য অবশ্যই শিশুর প্রতি বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। সাধারণত ৫ বছর বয়সের মধ্যেই শিশুর মস্তিষ্কে প্রায় সার্বিক গঠন ও বিকাশ সম্পন্ন হয়। এ সময় কিছু সাধারণ পন্থা অবলম্বন করলে আপনার শিশুর মেধার বিকাশ দ্রুত হতে থাকে। চলুন উপায়গুলো জেনে নিই ।

শিশুর মেধা বিকাশের জন্য গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিন

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে প্রথমে গর্ভবতীর মায়ের যত্ন নেওয়া। যেহেতু শিশুর বুদ্ধির বিকাশের সত্তর ভাগ মায়ের গর্ভকালীন থাকা অবস্থায় শুরু হয় তাই গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিয়ে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটানো সম্ভব। গর্ভবতী মা ভালো থাকলেই ঘটবে শিশুর মেধা বিকাশ।

এই সময় পরিবারের সকলের দায়িত্ব হবে গর্ভবতী মাকে হাসিখুশি রাখা , মানসিক চাপমুক্ত রাখা। এই সময় গর্ভবতী মা যেন কোনরকম দুশ্চিন্তা না করে , তার মন খারাপ হতে পারে এমন কোন আচরণ তার সাথে করা যাবে না। কারণ গর্ভবতী মা মন খারাপ হলে মনে কষ্ট পেলে তার প্রভাব পড়বে তার পেটের সন্তানের উপর। তাই আপনাকে সবসময় হাসিখুশি থাকতে হবে।

সন্তান গর্ভে থাকাকালীন সময়ে আপনাকে পরজাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নিতে হবে। এ সময় আপনাকে বেশি করে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিজের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। খাবারের প্রতি যত্নবান হবে। এ সময় আপনাকে নিয়ম করে আয়রন , জিংক, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।

শিশুর মেধা বিকাশের জন্য প্রয়োজন সঠিক খাবার

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে শিশুর মস্তিষ্ককে সক্রিয় ও সতেজ রাখা। আর এজন্য প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারের। পুষ্টিকর খাবারের মাধ্যমে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবেন। শিশুর মেধার বিকাশের জন্য শিশুকে প্রতিদিন ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেতে দিন.বেশি করে প্রোটিন, জিংক, ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খাওয়ান।

শিশুকে প্রতিদিন সুষম খাবার যেমন দুধ, ডিম, আমান্ড, কাঠ বাদাম, টাটকা ফলের রস ,মাছ মাংস সুপ বানিয়ে খাওয়াতে পারেন। ডিম প্রোটিনের উৎস আমরা সবাই জানি। তাছাড়া ডিমের কুসুমে কোলিং থাকে যা শিশুর স্মৃতিশক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দুধ ও দুধ জাতীয় খাবারে রয়েছে প্রোটিন ও ভিটামিন বি যা শিশুর মস্তিষ্কের গঠনের জন্য অপরিহার্য।

তবে আমাদের মনে রাখতে হবে শিশুকে জোর করে কোন কিছু খাওয়া যাবেনা। শিশু যতটুকু খেতে চাইবে ঠিক ততটুকুই শিশুকে খাওয়াতে হবে। শিশুকে একসাথে বেশি করে খাওয়াবেন না কিছুক্ষণ পর পর খাওয়াতে হবে। আপনি প্রতিদিন একই খাবার শিশুকে খাওয়াবেন না। শিশুর খাবারের মধ্যে আপনাকে নতুনত্ব নিয়ে আসতে হবে।

শিশুর মেধা বিকাশে চাই পর্যাপ্ত ঘুম

শিশুর মেধাবিকাশে প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুমের। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে অপর্যাপ্ত ঘুম শিশুর মেধার বিকাশে বিঘ্ন ঘটায় । তাই শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা। অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা ঠিকমতো ঘুমায় না সারাক্ষণ বিরক্ত করে কান্নাকাটি করে। এরকম সমস্যা হলে অবশ্যই আপনাকে একজন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।

শিশুর মেধা বিকাশে প্রয়োজন শিশু বান্ধব পরিবেশ

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে শিশু বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা। পারিবারিক অশান্তি উপহাস কিংবা তাচ্ছিল্য, কটু কথা শোনা, পরিবারের সদস্যদের শিশুর প্রতি উদাসীনতা ইত্যাদির ফলে একটি শিশুর সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শিশু্র মানুসিক শক্তি, বুদ্ধিমত্তা, প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রয়োজন তার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।

 আপনি শিশুর সামনে কারো সাথে ঝগড়া করবেন না, উঁচু গলায় কারো সাথে কথা বলবেন না, কাউকে গালি মন্দ করবেন না, কাউকে কটু কথা বলবেন না। শিশুর সামনে কাউকে অপমান বা অসম্মান করে কথা বলবেন না। আপনি শিশুর সামনে সিগারেট সহ অন্যান্য যেকোন নেশা করবেন না। এতে করে শিশুর মনের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে।

শিশুর মেধা বিকাশে প্রয়োজন নিয়মিত কথা বলা ও শোনা

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে শিশুর সঙ্গে প্রচুর কথা বলা। নানারকম প্রশ্ন করুন শিশুকে যেন সে মাথা খাটাতে পারে। এতে করে শিশুর একাগ্রতা বাড়বে। শিশু পরিবারের কাছ থেকে সব কিছু শেখে। শিশুকে ভালোভাবে কথা বলার ধরন, বিভিন্ন কাজ করার ধরন গুছিয়ে বলুন। এতে শিশুর বিভিন্ন কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

আপনি শিশুকে বিভিন্ন জিনিস ও বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন। এতে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটবে। আপনাকে একজন ভালো শ্রোতা হতে হবে। শিশুরা প্রচুর কথা বলে। তারা অহেতুক বিভিন্ন প্রশ্ন করে। তাদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার করতে ভালোবাসে।

 শিশুদের বেশিরভাগ কথা বড়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।এটা মনে রেখে অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে শিশুর কথা শুনুন। বিরক্ত হবেন না। এতে শিশু কথা বলার সময় নিরাপদ বোধ করবে। যার ফলে ভবিষ্যতে শিশু আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।

শিশুর মেধা বিকাশে প্রয়োজন পছন্দমত কাজ করতে দেওয়া

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে শিশুকে অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেননা। প্রতিটি শিশু আলাদা। কেউ গান ভালো পারে, কেউ নাচ ভালো পারে, কেউবা আঁকতে ভালোবাসে। শিশু যেটা ভালো পারে সেটা করতে ভালোবাসে সেটা শিশুকে করতে দিন। যেটাতে সে ভালো করে সেটা নিয়ে শিশুকে প্রশংসা করুন। এতে করে শিশুর কাজের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

আর যেটা শিশু ভালো পারেনা সেটা নিয়ে অন্য শিশুদের সঙ্গে তুলনা করবেন না বা তিরস্কার করবেন না। যেটাতে শিশু ভালো করে না সেটাতে আরো ভালো করার জন্য উৎসাহ দিন। শিশুর সব কাজ করে দিবেন না । খাওয়া, গোসল করা, ঘর গোছানো ইত্যাদির কাছে উৎসাহিত করুন। এতে শিশুর কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়বে।

শিশুর মেধা বিকাশে ভালো অভ্যেস গড়ে তুলুন

শিশুর মেধা বিকাশে করণীয় হচ্ছে শিশুর মধ্যে ভালো অভ্যেস গড়ে তোলা। অন্য ভাল অভ্যাসের মধ্যে অন্যতম হলো বই পড়ার অভ্যেস। শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের বই কিনে দিন। ছোটবেলা থেকে শিশুদের সাথে নিয়ে বই পড়ুন, তাদের বই পড়ে শোনান, তাদের সাথে গল্প করুন। তবে হ্যাঁ মনে রাখবেন বই পড়ার জন্য অতিরিক্ত চাপ দেবেন না।

লেখা বা আঁকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। শিশুর হাতে রং পেন্সিল, খাতা কলম, তুলে দিন। নিজের মতো করে শিশু লেখক আঁকুক। শিশুর লেখা বা আঁকা ছবি দেওয়ালে লাগিয়ে রাখুন। এতে করে শিশু উৎসাহিত হবে। কাজের প্রতি শিশুর আগ্রহ বাড়বে।

শিশুর সাথে খেলাধুলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনি শিশুর সাথে বিভিন্ন মেমোরি গেম খেলতে পারেন। এতে শিশুর স্মৃতিশক্তির বিকাশ ঘটবে। গাছ লাগানো,পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, বিভিন্ন নিয়ম-কানুন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে শিশু নিয়মানুবর্তিতা শিখবে।

শিশুর মেধা বিকাশে প্রয়োজন সাংস্কৃতিক চর্চা

শিশুর মেধার বিকাশে সহায়তা করতে পারে গান। ছোটদের মনোযোগ বাড়াতেও গান শেখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া আবৃত্তি, নিত্য, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের চর্চা করা ও ভালো। এতে শিশুর মেধার বিকাশ ঘটে মন ও ভালো থাকে।

শিশুর ওপর সব সময় কোন কিছু চাপিয়ে দেবেন না। কোন কিছু নিয়ে শিশুর উপর জোর করবেন না। তাকে তার মত করে পছন্দ ও দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ করে দিন। এতে শিশুর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। পরিবারের ও প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে আপনার শিশুকে মিশতে দিন এবং তাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিন। এতে করে শিশুর মধ্যে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।

শেষ কথা - শিশুর মেধা বিকাশে করণীয়

শিশুকাল থেকে শিশুর মেধা বিকাশে করনীয় শিশুর জন্য সুস্থ পরিবেশ গড়ে তোলা, তাদের সাথে সুস্থ ভাবে কথা বলা, ভালো কাজে সাহস দেওয়া , তাদের ভুলকে শুধরে দেওয়া , অতিরিক্ত চাপ না দেওয়া ইত্যাদি। মনে রাখবেন আপনি শিশুকে বকা, ধমক, উচ্চস্বরে কথা বলবেন না ও মারধর করবেন না। এতে শিশুর মেধার বিকাশে বিঘ্ন ঘটে।

 সৃজনশীল বিভিন্ন কাজে শিশুকে উৎসাহিত করুন। আপনি সময় পেলেই শিশুকে নিয়ে ঘুরতে যান। বিভিন্ন পরিবেশের সাথে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিন। এতে শিশুর মন ভালো থাকবে, মেধার বিকাশ ও ঘটবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সাওদাকেয়ার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url